ইনসাইড বাংলাদেশ

অশান্ত পার্বত্য অঞ্চল: সেনা উপস্থিতি বৃদ্ধি সময়ের দাবি


প্রকাশ: 05/04/2024


Thumbnail

পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। একটি সশস্ত্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পুরো পার্বত্য এলাকাকে অস্থির করে তুলছে। একের পর এক ব্যাংকে হামলার পর তারা সেখানে একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। 

বান্দরবানের দুটি উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট এবং অপহরণের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তারা থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে এবং গভীর রাতে আলীকদম একটি তল্লাশি চৌকিতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এই দুই ঘটনায় অবশ্য কোনো পুলিশ সদস্য আহত হয়নি। 

কুকি চিন দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এখন তারা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং এই অঞ্চলকে আতঙ্কের অঞ্চল হিসাবে তৈরি করার চেষ্টা করছে। দুই বছর আগে পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ এখন এই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব এবং শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত নতুন কিছু নয়। জিয়াউর রহমানের ভুল রাজনীতির কারণে এই পাহাড়ে অশান্ত সৃষ্টি হয়েছিল। তবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীর সেনারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিতে সবসময় নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি যুদ্ধ অবস্থা ছিল। সেসময় যদি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যথাযথ এবং কার্যকর কোন ভূমিকা না পালন করত তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিশেষ করে শান্তি বাহিনী এবং অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলো একটি অন্য রকম পরিস্থিতি তৈরি করত। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী যে সবসময় সদা জাগ্রত এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনা তার একটি বড় প্রমাণ। 

কিন্তু ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর পাহাড়ে শান্তি আসে। আস্তে আস্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি গুলো বাস্তবায়ন শুরু হয়। যদিও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে এখনও সরকারের নানা রকম টানাপোড়েন এবং বিরোধ আছে। প্রতি বছরই এই শান্তিচুক্তি দিবসে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শান্তি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সরকার সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং দীর্ঘদিন শান্তির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সেখান থেকে সেনাবাহিনী গুটিয়েও নেওয়া হয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে গত দুই বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের নামে একটি পাতা খুলে আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করে। এরপর তারা রাঙ্গামাটি, বিলাইছড়ি, বড়থলি ইউনিয়স, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচিতে সহিংস তৎপরতা শুরু করে। 

গত দুই বছরে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি নয়টি বড় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। গত বছর কেএনএফ এর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাঁচ সেনা সদস্য নিহত হন। আরেকটি সশস্ত্র ইউপিডিএফ এর সঙ্গেও সংঘর্ষে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় ৮ জন এবং রুমা উপজেলায় একজন নিহত হন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্রমশ অশান্ত হয়ে উঠেছে।

এটা মনে রাখতে হবে তিন পার্বত্য জেলা অখন্ড বাংলাদেশের প্রতীক। বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে যে বিচ্ছিন্নবাদী তৎপরতাগুলো হচ্ছে তা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। কোন ভাবে এদেরকে প্রশয় দেয়া যাবে না। কেএনএফ এর সঙ্গে যে ধরনের সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল এ সমস্ত সংলাপ অবিলম্ব বন্ধ করতে হবে এবং পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূখন্ড যেন হাতছাড়া না হয় সে দায়িত্ব আমাদের সকলের। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭