এডিটর’স মাইন্ড

নানা চাপে ড. রাজ্জাক


প্রকাশ: 05/04/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক গত মেয়াদে তিনি ছিলেন দলের অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যক্তি। একদিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অন্যদিকে তিনি কৃষিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে আগে নানা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তিনি মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। এ বার তিনি মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। প্রেসিডিয়ামেও তিনি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। রাজনীতিতেও তিনি নানা রকম চাপের মধ্যে রয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক এখন রাজনীতিতে একটি সংকটের সময় কাটাচ্ছেন।

যদিও ড. রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠরা বলেন যে, তিনি এখনও ভালো অবস্থানে আছেন। দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে যে, ড. রাজ্জাকের আগের অবস্থা এখন আওয়ামী লীগে নেই। তিনি দলের মধ্যেই এখন কোণঠাসা। 

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের এই নেতার উত্থান অনেকটা নাটকীয়ভাবে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আবুল হাসান চৌধুরীর দ্বৈত নাগরিকত্বের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এই সময় ড. রাজ্জাককে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ভাগ্যিস, এসময় হয় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিন বছর নির্বাচন করা যাবে না- এই বিধান ছিল না। এই বিধান যদি থাকত তাহলে হয়ত ড. রাজ্জাক তখন নির্বাচন করতে পারতেন না। যাই হোক, ড. রাজ্জাক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। মতিয়া চৌধুরী যখন কৃষি মন্ত্রী তখন তার সঙ্গে মনোমালিন্য করে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। 

আবুল হাসান চৌধুরী নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিলে ড. রাজ্জাকের ভাগ্য খুলে যায় এবং তিনি নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। টাঙ্গাইল এমনিতেই আওয়ামী লীগের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র। কাজেই নির্বাচনে জয়ী হতে তাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। এরপর আর ড. রাজ্জাককে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৭ সালে এক-এগারো সময়  ড. রাজ্জাকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, তিনি সংস্কারপন্থি ছিলেন। কিন্তু তারপরও অন্য সংস্কারপন্থিদের মতো তার পরিণতি হয়নি। এর কারণ হল দুটি। প্রথমত, তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক রক্ষা করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি সংস্কারপন্থি যদি থেকেও থাকেন তাহলে তিনি সেটি অত্যন্ত গোপনে ছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেন যে, ২০০৭ সালের এক-এগারো সময় তার ভূমিকা রহস্যময় ছিল।

কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ভূমিধ্বস বিজয়ের পর ড. রাজ্জাক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের গঠিত মন্ত্রিসভায় তাকে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন এবং একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি কৃষিমন্ত্রী হন এবং মতিয়া চৌধুরী মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন। এ সময় ড. রাজ্জাকের প্রভাব প্রত্তি ইত্যাদি সবই বেড়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের আগ দিয়ে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি মন্ত্রিসভায় আসেননি। তার সৎ বোন হিসেবে পরিচিত শামসুন্নাহার চাঁপাকে প্রতিমন্ত্রী করে দিয়ে ড. রাজ্জাককে একটা বার্তা দেয়া হয়েছে। আবার এলাকাতেও তিনি নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। সবকিছু মিলিয়ে দলের রাজনীতির মধ্যে এক ধরনের চাপে রয়েছেন তিনি। অনেকে মনে করেন যেহেতু রাজ্জাক এখন মন্ত্রী নেই তাদের ধারণা নির্বাচনের আগে দলের সভাপতি তার ওপর ক্ষেপা। এজন্য এলাকায় তার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে। আর এই ষড়যন্ত্র পাশ কাটিয়ে ড. রাজ্জাক রাজনীতিতে আবার আগের মতো কর্তৃত্ববান হতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭