ইনসাইড বাংলাদেশ

ঈদকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত পর্যটন কেন্দ্রগুলো, ভালো ব্যবসার প্রত্যাশা


প্রকাশ: 06/04/2024


Thumbnail

সন্নিকটে পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাকি নেই এক সপ্তাহও। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন লাখো পর্যটক। আর তাই প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটক বরণে প্রস্তুত হচ্ছে। দিচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ছাড়।

ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। তবুও অনেক হোটেল-মোটেল, রিসোর্টের রুম এখনো অনেক খালি পড়ে আছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পর্যটন খাতেও পড়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া অতিরিক্ত গরম থাকলেও পর্যটকের সংখ্যায় প্রভাব ফেলবে। ফলে এবারের ঈদে গতবারের চেয়ে কম ব্যবসা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, ব্যবসা ভালো হবে।

এদিকে, পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের যাতায়াত বান্দরবানে। বলা হয়ে থাকে কক্সবাজারের পর বান্দরবানেই সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা থাকে। কিন্তু গত বুধবার থানচিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দুটি ব্যাংক লুট ও বৃহস্পতিবার রাতে থানা আক্রমণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, দেশের পূর্বাঞ্চলের পর্যটনকেন্দ্র সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারের হোটেল-রিসোর্টের রুম অর্ধেকের বেশি বুকিং হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী এ প্রসঙ্গে বলেন, পর্যটন খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, এর ৩০ শতাংশ হয় দুই ঈদে। এর মধ্যে রোজার ঈদে ২০ শতাংশ এবং কোরবানির ঈদে ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়। এবারও আমরা তাই আশা করেছিলাম। তার পরও শঙ্কা রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, গরম বাড়ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। তা ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বান্দরবানের ঘটনা। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে পর্যটনের ওপর প্রভাব ফেলবে।

দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার। এখানে গড়ে ৩০ শতাংশ ছাড় এবং নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ অফারের পরও কাঙ্ক্ষিত বুকিং না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে ওয়াহিদুর রহমান রুবেল জানান, পর্যটকদের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ ৩০-৪০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তার পরও এখন পর্যন্ত প্রায় সব হোটেলে ২০-৩০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে। তবে তারকা মানের কয়েকটি হোটেলে ১২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই হয়তো আরও কিছু কক্ষের বুকিং হবে। কিন্তু এ অবস্থা চললে এবার ব্যবসায় মন্দা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তার পরও পর্যটক আকৃষ্ট করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে সাজাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। হোটেলের ভেতর-বাইরে রং ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব দিকে খেয়াল রাখছে কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম নেওয়াজ বলেন, বিগত বছরগুলোতে রোজার ১৫ দিনের মধ্যে হোটেলের ৬০ ভাগ কক্ষ বুকিং হতো। এবারে আজকের (বৃহস্পতিবার) দিন পর্যন্ত মাত্র ২০-৩০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তার পরও আমরা আশাবাদী, কয়েকদিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বুকিং হবে। ব্যবসাও ভালো হবে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের জনসংযোগ কর্মকর্তা সায়ীদ আলমগীর বলেন, এবার ঈদের আগে-পরে প্রায় ১০ দিনের ছুটি থাকলেও ব্যবসা হতে পারে মাত্র চার দিন। এখনো হোটেল কক্ষের তেমন বুকিং না হলেও ১২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল তিন দিন শতভাগ বুকিং রয়েছে আমাদের।

এদিকে পর্যটকের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকের সেবা নিশ্চিত ও নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটন স্পটগুলো এবং সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পোশাকধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।

পর্যটক হয়রানি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। তার পরও হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা চালকের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, বান্দরবানের সম্প্রতি সন্ত্রাসী ঘটনায় পর্যটন ব্যবসায় ধস নামবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কুকি-চিনের সন্ত্রাসী ঘটনায় অনেক হোটেল-রিসোর্টের বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকরা। গত ডিসেম্বরেও ভরা পর্যটন মৌসুমের সময় পাহাড়ি এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতার কারণে ব্যবসা হয়নি। এবারের ঘটনা আরও ভয়াবহ।

বান্দরবান শহরের কাছেই লাবাতং হিল রিসোর্টের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান এ প্রসঙ্গে মোবাইলে কালবেলাকে বলেন, আমাদের রিসোর্টের প্রায় সব রুমই ঈদের জন্য বুকিং হয়েছিল। কিন্তু গত দুদিনের ঘটনায় অনেক পর্যটক বুকিং বাতিলের জন্য যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার শঙ্কা থাকলে পাহাড়ে ঘুরতে পর্যটকরা আগ্রহ হারাবে।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত দুদিনের ঘটনায় পাহাড়ের পর্যটনের ওপর অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ পর্যটকরা নিরাপত্তা চান। এবারের ঈদের ব্যবসা নিয়ে বান্দরবানের ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় রয়েছেন।

পার্বত্যাঞ্চলের আরেক জেলা খাগড়াছড়ির পর্যটক ব্যবসায়ীরা ঈদে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন। খাগড়াছড়ি থেকে মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মেঘের রাজ্য সাজেককেন্দ্রিক পর্যটকের ভিড়ে বছরজুড়েই মুখর থাকে খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলো। ঈদে পর্যটকের চাপ বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ঈদে জেলা পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া, হর্টিকালচার সেন্টার ঝুলন্ত ব্রিজ, শিলাছড়ি, জলপাহাড় ও মায়াবিনী লেকসহ বিভিন্নস্থানে পর্যটকের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি থাকবে।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, পর্যটন অর্থনীতির বিকাশের জন্য আলুটিলা এলাকায় বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা বিনিয়োগে প্রস্তুত আছি।

বর্তমানে খাগড়াছড়িতে পর্যটকরা তিন থেকে চার ঘণ্টা ভ্রমণ করলেই সব স্পটে বেড়ানো শেষ হয়ে যায় যোগ করে তিনি বলেন, এখানে ঝরনাকেন্দ্রিক আরও অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সেখানে যেতে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও কাজ করে বলে জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি বলেন, প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে আমাদের কন্ট্রোল রুমের নম্বর দেওয়া আছে। এ ছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সুন্দরবনে ঈদে পর্যটকদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটররা জানান, এবারের ঈদে পর্যটকের বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বুকিংয়ের পরিমাণও সন্তোষজনক।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিড জানান, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ১১২ এবং পর্যটকবাহী লঞ্চ বা জাহাজ রয়েছে ৬৫টি। প্রায় চারভাগের তিনভাগ লঞ্চ বুকিং হয়ে গেছে।

দেশের পূর্বাঞ্চলের পর্যটনকেন্দ্র সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ কেন্দ্র করে অধের্কের বেশি হোটেল-রিসোর্টের রুম বুকিং হয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ব্যবসা ভালো হবে বলে তাদের আশা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭