ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

হাজারও সংস্কৃতিতে ইন্দেনেশিয়ার রমজান


প্রকাশ: 06/04/2024


Thumbnail

রমজানকে বর্ণিল আয়োজনে স্বাগত জানানো হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। রমজান উদযাপনে তাদের বিচিত্র রকমের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত 'ইনসাইড রমজান' ধারাবাহিক এর আজকের পর্বে আমরা জানবো ইন্দোনেশিয়ার রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি- 

দেশটিতে রমজান শুরু হয় উৎসবের মধ্য দিয়ে। রহমতের মাসের চাঁদ ওঠার সংবাদ প্রচার হওয়ার পর তাদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের পাশে কোনো খোলা জায়গায় বিশাল ড্রাম বাজিয়ে সবাই পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়। 

ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় কিছু রমজান সংস্কৃতি তুলে ধরা হলো-  

দুগদেরানঃ ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার সেমারাং শহরের বাসিন্দারা হাজার বছর ধরে ‘দুগদেরান’ নামের এক উৎসব পালন করে থাকেন। রমজান মাস শুরুর সংকেত হিসেবে প্রতি বছরই দেশটির মসজিদগুলোতে ঢাক পেটানো হয়। ‘দুগ’ শব্দটি এসেছে মসজিদের ওই ঢাকের শব্দ থেকে। এর পাশাপাশি মসজিদের কামান থেকে গোলাবারুদ ছোঁড়া হয়। ‘দার’ শব্দটি এসেছে কামানের ওই আওয়াজ থেকে। সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগ থেকে সেমারাং শহরের বাসিন্দারা এ উৎসব পালন করে থাকেন। উৎসবে বাসিন্দারা রং-বেরঙের পোশাক পরেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

মিউগ্যাংঃ রমজানকে স্বাগত জানিয়ে দেশটিতে মিউগাং নামের ঐতিহ্য পালন করা হয়। এ ঐতিহ্য অনুসারে রমজানের দু-একদিন আগে পশু জবাই করা হয় এবং রমজান মাসের জন্য মাংস সংরক্ষণ করা হয়। রমজান মাসে পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়ে নাইকার বা কবর জিয়ারত পালন করা হয়। রমজানের আগে কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং মাসজুড়ে জিয়ারত করা হয়।

নাইরংঃ জাকার্তার ‘বিটাভি’ সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে এই সম্প্রদায়ের লোকেরা রমজানে পরস্পরকে গোশত, পিঠা, মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন প্রকার তৈরি খাবার উপহার দিয়ে থাকে।

পাদুসানঃ জাভা অঞ্চলের রমজান সংস্কৃতি পাডুসান। রমজান মাস আত্নশুদ্ধির মাস, তাই আত্নশুদ্ধিতা অর্জনের জন্য রমজানের শুরুতে বিশেষ গোসলের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা রমজানকে বরণ করে নেন, এই বিশেষ গোসলকে স্থানীয় ভাষায় "পাদুসান" বলা হয়, ইন্দোনেশীয় মুসলমানরা এই পাদুসান বা বিশেষ গোসলের মাধ্যমে পবিত্র রমজানে মাসের আগমন উদযাপন করেন, ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশে এই প্রথার প্রচলন সবচেয়ে বেশি।

বাগারাকান সাহুরঃ ইন্দোনেশিয়ার সাউথ কালির কাটুবারুর অঞ্চলে যুবকরা শেষ রাতে মানুষকে সাহরি খাওয়ার জন্য ডেকে দেয়। সাধারণত তারা সুরে সুরে ছন্দবদ্ধ বাক্যে মানুষকে সাহরির জন্য জাগিয়ে তোলে। এই সময় যুবকরা বোতল, গ্যালন ও ক্যান বাজায়।

ইলা ইলা উৎসবঃ কয়েক শতাব্দী ধরে ইন্দোনেশিয়ার টার্নেট অঞ্চলে ইলা ইলা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। যেখানে মুসলিম লাইলাতুল কদরকে স্বাগত জানায় এবং তার বরকত লাভের চেষ্টা করে। তা হলো কদরের রাতে স্থানীয় মুসলিমরা মশাল, টর্চলাইট, মিষ্টান্ন ও সুগন্ধি নিয়ে বের হয়। তারা মশাল জ্বালিয়ে লাইলাতুল কদরকে স্বাগত জানায়, সুগন্ধি ছিটিয়ে তাঁর সৌরভ ছড়িয়ে দেয় এবং মিষ্টান্ন বিতরণ করে পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়।

মিকরানঃ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মুসলিমরা রমজান মাস উদযাপন করেন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বন্টেন প্রদেশে রমজানে কোরআন পাঠের সংস্কৃতি একটু ভিন্নতর। এ প্রদেশের মুসলিমরা নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে তারাবির পর থেকে সাহরি পর্যন্ত অবিরত কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলীয় অধিকাংশ প্রদেশে ‘মিকরান’ নামের কোরআন পাঠের এ ঐতিহ্য অদ্যাবধি চালু রয়েছে।

দেশটির মানুষজন ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম ফল এবং ফলের শরবতকে প্রাধান্য দেয়। এছাড়া, তাদের ইফতার আয়োজনে নানা রকম মিষ্টি জাতীয় খাবারও থাকে।

তাদের ইফতারে বুবুর চ্যান্ডিল নামক এক ধরনের মিষ্টি থাকে। যেটি মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি। বিজি সালাক, কলা, মিষ্টি আলু অথবা কুমড়া দিয়ে তৈরি হয় কোলাক। এস পিসাং ইজো সহ আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার এসময় ইন্দোনেশিয়ানরা তৈরি করে থাকে।  

ইফতারে ইন্দোনেশিয়ানদের নিকট পছন্দনীয় খাবার হল খেজুর, কিচাক, কোলাক ইত্যাদি।

এছাড়াও, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মতো ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে আশ্রিত মুসলিম অভিবাসীরাও রোজা রাখেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুয়ালালাঙসা শহরের এই শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের শতাধিক নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার পক্ষ থেকে এসব মানুষের জন্য ইফতার ও সাহরির আয়োজন করা হয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭