ইনসাইড বাংলাদেশ

নাথান বম এখন কোথায়, কেএনএফ এসব করছে কিভাবে?


প্রকাশ: 06/04/2024


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় স্নাত, এরপর ইংল্যান্ড থেকে চারুকলায় ডিপ্লোমাও নিয়েছেন নাথান বম।  

পড়াশোনা শেষ করার পর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি, যেকারনে ক্ষোভ জন্মে। তাছাড়া ইংরেজি ভাষায় বইও লিখেছিলের তিনি। পর্যটন ব্যবসাসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু লাভজনক হয়নি কোনটাই।  

একসময় একটি এনজিও করেন। এরই মধ্যে নানা মহলের সহযোগিতা নিয়ে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কীভাবে এই সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুললেন নাথান বম? তার শক্তির উৎস কোথায়? আর এই মুহূর্তে তিনি আছেনই বা কোথায়? 

নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার বিচারে পঞ্চম বম জনগোষ্ঠীর সদস্য। এই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার এডেনপাড়া সড়কে নাথানের পৈতৃক নিবাস। পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না কখনোই। তারপরও এই পরিবার এবং জনসংখ্যায় কম একটি জাতিগোষ্ঠীর ভেতর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়ার সুযোগ পাওয়া এলাকার অনেককেই গর্বিত করত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম সম্পর্কে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তার দুই বছরের বয়সে বড় আরেক পাহাড়ি ব্যক্তি বলেন, 'ছেলেটা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী এবং অনেকক্ষেত্রে হঠকারীও বটে। এটা অনেক আগে থেকেই টের পেতাম। কিন্তু যখন নতুন রাজ্য তৈরির আন্দোলনের নামে এসব সন্ত্রাসী কাজ শুরু করলে, বিষয়টা আরও স্পষ্ট হলো।' 

নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএস সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। বান্দরবানের চেঙ্গি স্কোয়ারে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আবক্ষ মূর্তি মুন্নি দেওয়ানের সঙ্গে তৈরি করেন নাথান বম। তবে একপর্যায়ে জেএসসের সঙ্গও ছাড়েন তিনি।

শিক্ষাজীবনের পর এডেন পাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাথান বম। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থের উৎস নিয়ে অনেকেরই ঔৎসুক্য থাকলেও তার রহস্য কখনো উন্মোচন করা যায়নি। নাথান সেই সময় তার জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একত্রিত করার জন্য নানারকম ভাবনা ভাবতে থাকেন। এসময় ‘জো’ নামে ইংরেজি ভাষায় একটা বইও লিখে ফেলেন। এর দাম ৩০০ টাকা ছিল।

এই সংগঠনটির আড়ালে তলে তলে নাথান কর্মী সংগ্রহ করতেন বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

২০১৮ সালের শেষদিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে নাথান এবং তার সঙ্গীসাথিরা এক ধর্মীয় পাস্তরকে তাদের সেই এনজিওর অফিসে তুলে বেধড়ক মারধর করে। আহত অবস্থায় তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এর পর পরই নাথান এলাকা ত্যাগ করেন। তিনি মিয়ানমারের কিছু অংশ এবং ভারতের মিজোরামে প্রায় যাতায়াত করতেন বলে অনেকে জানান।

২০১৮ সালের শেষদিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। 

নাথানের দল কেএনফের প্রচারের একটা বড় অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জেএসএস এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অবস্থান নেওয়া। অনেকেই মনে করেন, জেএসসের বিরুদ্ধে একটা সশস্ত্র দলের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের হোক, এটা যারা চাইতেন, তারাই নাথানকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।

২০২২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা, সশস্ত্র দলের নানার ছবি ইত্যাদি দিয়ে কেনএফের কর্মকাণ্ড জাহির করলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২০২২ সালের মে মাসে জাতীয় দৈনিকগুলোর মধ্যে প্রথম প্রথম আলোতেই কেনএফের অস্তিত্বের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই সময় এই প্রতিবেদক রুমা থানার ওসি এবং বান্দরবানের তৎকালীন পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলেন। 

নাথান বম কোথায় আছেন, সেটা সম্পর্কে কেউ না জানলেও,  এত বড় বড় অপারেশনে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বড় নেতা অর্থাৎ নাথান যে কাছে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এটা ধরে নেওয়া যায়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭