ইনসাইড থট

‘স্বাস্থ্য অধিকার’ নিশ্চিতে এসডিজি অর্জনের ২০৩০ সাল খুব বেশি দূরে নয়


প্রকাশ: 07/04/2024


Thumbnail

২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্য, উন্নয়ন এবং মানবিক কাজে নিয়োজিত ১৩টি বহুপাক্ষিক সংস্থাকে একত্রিত করে বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে যা ‘এসডিজি-৩ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান’ নামে পরিচিত। এর লক্ষ্য হল দেশগুলিকে স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করা। যাতে সবাই মিলে সুসমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া যায় ও দেশে দেশে নেয়া জাতীয় পরিকল্পনাগুলিতে আরও সমন্বিত ও সারিবদ্ধ সমর্থন প্রদানের জন্য সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত থাকে। 

ধারণা করা হয়েছে, এতে যদি কোন দেশের অদক্ষতা থেকে থাকে তাদের নিয়ে একসাথে কাজ করার উপায়ও বের করে আনা যাবে। উন্নত স্বাস্থ্য সেবা কৌশল অর্জনে বাংলাদেশের মত আরো অনেক দেশগুলোর সুযোগ রয়েছে সেগুলো যেন যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি পায় তা-ও নিশ্চিত রাখা যা এই অ্যাকশন প্ল্যানের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমরা জানি ইতোমধ্যে জাতিসংঘের একটি রেজুলেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক স্বাস্থ্যখাতের অন্যতম উদ্ভাবন ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ একটি বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি সফল কার্যক্রমের সম্মানজনক দৃষ্টান্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর আগেও, ২০৩০ সালের মধ্যে কোনো দেশই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে ছিল না। একাধিক চলমান সংকটের কারণে এই মহামারীটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং এমনকি বৈশ্বিক লক্ষ্যের দিকে দেশগুলোর অগ্রগতিও বিপরীতমুখী হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ‘গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর হেলদি লাইভস অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফর অল (SDG3 GAP)’-এর মাধ্যমে যে ১৩টি বহুপাক্ষিক সংস্থা তাদের সহযোগিতা জোরদার করার জন্য প্রতিশ্রুতি রেখেছে সেগুলো প্রধানত আন্ত-সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম যা সবগুলো দেশের জন্য স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক। সহযোগিতার নতুন উপায়গুলিকে বের করে আনাও এই প্ল্যানের অন্যতম লক্ষ্য যাতে দেশগুলো গভীর কৌশলের সাথে তাদের সহায়তার সমন্বয়ে নিজেদের দক্ষতা উন্নত করতে পারে।

দেশগুলির এইসব প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ অর্জনের জন্য টেকসই অর্থায়নকৃত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমকে শক্তিশালী করা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করা, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা এবং রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে দেশগুলির সক্ষমতা শক্তিশালী করা। কোভিড-১৯ মহামারী প্রমাণ করেছে যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করা যেতে পারে, যার মধ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ সালের যেসব এজেন্ডা রয়েছে, যা কাউকে পিছনে না রাখার সংকল্প নিশ্চিত করে। শক্তিশালী বহুপাক্ষিক সহযোগিতা স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত এসডিজি অর্জনের দিকে দেশগুলির অগ্রগতি সমর্থন করার একটি উপায়ও বটে।

২০১৫ সালে যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তার ২০৩০ এজেন্ডা নির্ধারণ করেছিল, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে বাংলাদেশ সময়ের আগেই স্বাস্থ্যের জন্য ‘কয়েকটি’ মাইলফলক লক্ষ্য অতিক্রম করবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৩-এ পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার এবং নবজাতক মৃত্যুর হারের শিশু-সম্পর্কিত সূচকগুলি, সেইসাথে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য নারী-সম্পর্কিত লক্ষ্যগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক স্থাপন করে তার কার্যকারিতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছে। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি যে প্রাথমিক পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (সচেতনতা, জীবন-কৌশল ও ওষুধ) সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাবিকাঠি।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যগুলি অর্জনে আমাদের এখন দরকার বাড়ি পর্যায়ে সেবা নিশ্চিত করা কারণ মানুষ অসুস্থ হয় বাড়িতেই (হাসপাতালে এসে কেউ অসুস্থ হয় না); আর এই সেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম-পাড়া-মহল্লা পর্যায়ে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কৌশলের উদ্ভাবনী উদ্যোগের সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তির সেবা সমন্বয়ে জরুরী যত্ন পরিষেবাগুলি বিকাশ করা ও নিশ্চিত রাখা প্রয়োজন, যেখানে সেপসিস, রক্তপাত, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো সময়-গুরুতর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সেবা যথাযথভাবে সরবরাহ করা সম্ভব। ২০১৯ সালে জেনেভায় ৭২তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে এই বিষয়টি স্বীকৃত হয়েছিল, যখন রেজুলিউশন ৭২.১৬ গৃহীত হয়েছিল এই মর্মে যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের জন্য জরুরি যত্ন ব্যবস্থা অপরিহার্য। এক বছরের মাথায় কোভিড মহামারিকালে এই ৭২.১৬ সিদ্ধান্ত কতোটা সঠিক ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।

এসডিজি ৩-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশে প্রাথমিক পরিচর্যা পরিষেবাগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য অবশিষ্ট ছয় বছর যথেষ্ট সময় নাও হতে পারে, তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক জরুরি যত্ন প্রশিক্ষণ ও সংযোগ কর্মসূচি অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কমাতে অবদান রাখবে। স্বাস্থ্য সমস্যার চলমান হারের অনুপাত বুঝাতে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকলের জন্যে শিক্ষা কর্মসূচী থাকা দরকার। কোভিড-১৯ মহামারী ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত, তা যত বড়ই হোক না কেন! আমাদের এখন যা দরকার তা হল উপযুক্ত নির্দেশনা, সহায়তা ও গ্রাম পর্যায়ে বাস্তবায়নের উৎসাহ দেয়া। 

লেখক: পরিচালক, আমাদের গ্রাম
ই-মেইলঃ rezasalimag@gmail.com


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭