ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি কেন ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না?


প্রকাশ: 07/04/2024


Thumbnail

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ৩ মাস পেরিয়ে গেছে। এই ৩ মাসে বিএনপির বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ছিল। নির্বাচনের পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা সরকার পতনের লক্ষ্যে বড় ধরনের আন্দোলন করবে। নির্বাচনের পর টুকটাক কিছু হলকা আন্দোলনের কর্মসূচি তারা অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু সেখান থেকেও দলটি সরে এসেছে। এখন দৃশ্যত বিএনপির মধ্যে হতাশা গ্রাস করেছে। 

৭ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি মানছে কি মানছে না সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু এই নির্বাচন বিএনপিকে উল্টো বিপর্যস্ত করেছে। অথচ ধারণা করা হয়েছিল যে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বিপর্যস্ত হবে। কিন্তু কেন উল্টো হল এবং কেন বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ টি কারণে বিএনপির এই অবস্থা হয়েছে। এই ৫ টি কারণের মধ্যে রয়েছে:
 
১. বিএনপি ভুল সিদ্ধান্ত: অনেকেই মনে করছেন যে, বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ ভুল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, এবার নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি করা হবে না। আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। কাজেই নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি করার সুযোগ ছিল না। আর একারণেই বিএনপি যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়াই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, তাহলে দলটির লাভই হতো। বেশ ভালো আসন পেত এবং নির্বাচনের কোন বড় ধরনের কারচুপি করলে সেটাও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি তে আসত এবং তখন সরকারকে উল্টো চাপে পড়তে হতো। কিন্তু বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অটুট থাকে। অনেকেই মনে করেন, বিএনপির এই নির্বাচন বর্জন ছিল তাদের ভুল রাজনীতির অংশ এবং এটি ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। এর ফলে বিএনপি এমন অবস্থায় পড়েছে যে সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। 

২. ২৮ অক্টোবরের ভুল সিদ্ধান্ত: ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে সমাবেশ করেছিল সেই সমাবেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মীদের সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিল। কিন্তু এই সমাবেশ থেকে বিএনপি যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল তা তারা রক্ষা করতে পারে না। এই সমাবেশের সময় পর থেকেই কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন শুরু করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। তারা প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে হামলা করায়, পুলিশ হাসপাতালে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। এখান থেকেই সরকারের হাতে বল তুলে দেওয়া হয় এবং সরকার এরপর গ্রেপ্তার করার লাইসেন্স পায়। এবং সেখান থেকেই বিএনপির মুখ থুবড়ে পড়ে। 

৩. আন্তর্জাতিক ভুল পর্যবেক্ষণ: বিএনপি তার আন্দোলনের কৌশলে পুরোপুরি ভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেবে, নির্বাচন মানবে না এ রকম একটি মনোভাব বিএনপি নেতাদের মধ্যে প্রবলভাবে প্রোথিত হয়েছিল। এবং তারা এটার ওপর ভর করেই তাদের আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করেছিল। যে কারণে বিএনপি নির্বাচনের পরে কোন নিশানা খুঁজে পাচ্ছে না। কোন পথে যাবে সেই পথও তারা হারিয়ে ফেলেছে।

৪. বিএনপির অপরিণামদর্শী নেতৃত্ব: বিএনপির নেতৃত্ব অপরিণামদর্শী এবং এই নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব ছিল প্রবল। লন্ডন থেকে বিএনপিকে পরিচালিত করা হচ্ছে। এই লন্ডন থেকে পরিচালিত নেতৃত্বের মধ্যে অপরিপক্কতাই শুধু নেই তার মধ্যে দৃষ্টি ভঙ্গির অভাবও প্রবলভাবে লক্ষ্য করা গেছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অসহযোগ আন্দোলনের মত হাস্যকর কর্মসূচি দেওয়া, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কৌশলগত উদ্ভাবনের অনুপস্থিতি বিএনপিকে একেবারে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। 

৫. মিত্রের অভাব: বিএনপি আন্দোলনের জন্য মিত্রদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। মিত্রদের বারবার সন্দেহ ও অবিশ্বাস করেছে। যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বৈঠক করলেও শেষ পর্যন্ত কোন জোট বা যৌথ আন্দোলন গড়ে উঠেনি। এটি বিএনপির জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি একেবারে বিপর্যস্ত ও দিশেহারা। এখান থেকে দলটি ঘুরে দাঁড়াবার কোন পথ পাবে কিনা সেটাই হলো এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭