ইনসাইড পলিটিক্স

মঈন খান ‘না’, মাঠের নেতাকে মহাসচিব চায় কর্মীরা


প্রকাশ: 07/04/2024


Thumbnail

বিএনপির মহাসচিব নিয়ে রীতিমতো সার্কাস চলছে। দলের বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে অপারগ। এই দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার অনীহার কথা তিনি দলের হাইকমান্ডকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার এই অনীহার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নাই। বিএনপির মধ্যে একটি মতামত হচ্ছে যে, আপাতত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাজ চালিয়ে যাক। 

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এবং অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া দুজনই মির্জা ফখরুল ইসলামকে নতুন মহাসচিব না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব একজন মহাসচিব নিয়োগ দেয়ার জন্য। 

এখন মহাসচিব কে হবেন—এই বিএনপিতে চলছে আলোচনা। তার চেয়ে বেশি আলোচনা চলছে কীভাবে নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া যায়। 
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের চেয়ারপারসন যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তিকে মহাসচিব পদ থেকে ছাঁটাই করতে পারেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে যে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন। তবে দলের কাউন্সিলে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। এটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর আগেও বিএনপিতে একাধিকবার মহাসচিব পরিবর্তন হয়েছে কাউন্সিল ছাড়াই। মান্নান ভূঁইয়াকে বেগম খালেদা জিয়া মহাসচিব থেকে ছাঁটাই করেছিলেন এবং খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এর আগেও কে এম ওবায়দুর রহমানকে মহাসচিব হিসেবে ছাঁটাই করা হয়েছিল কাউন্সিল ছাড়াই। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব থেকে কাউন্সিল ছাড়া বাদ দিতে রাজি নন অন্য কারণে। কারণ এই মুহূর্তে বিএনপির মহাসচিব হওয়ার মতো কোন যোগ্য নেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যাকে নেতাকর্মীরা গ্রহণ করবে। 

মঈন খান নিজে মহাসচিব হতে আগ্রহী। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুপস্থিতিতে তিনি অলিখিত ভাবে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু মাঠের কর্মীরা তাকে একজন বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবার কেউ কেউ ঠাট্টা ছলে আঁতেল মনে করে। তাকে কেউ একজন রাজনৈতিক নেতা মনে করেন না। মাঠের সঙ্গে ড. মঈন খানের সম্পর্ক খুবই কম। যদিও তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় একাধিকবার বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু তার এলাকাটি ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপি এবং তাদের পারিবারিক প্রভাবের কারণে তিনি জয়ী হয়েছেন বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন। তারা মঈন খানকে একজন মাঠের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

বিএনপির কর্মীরা চায় এমন একজন মহাসচিব হোক, যিনি কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত থাকবেন, কর্মীদের চিনবেন, বিভিন্ন এলাকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানবেন, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক থাকবে এবং তিনি নিজে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন। এই সবগুলো গুণাবলীর মধ্যে কোনটি মঈন খানের নেই বলেই কর্মীরা মনে করেন। একজন ভদ্র মার্জিত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হলেও মঈন খানের এই সঙ্কটের কারণেই তাকে মহাসচিব শেষ পর্যন্ত করা নিয়ে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দু টানার মধ্যে রয়েছেন। আর অন্য যারা মহাসচিব হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য বা জনপ্রিয় তাদেরকে মহাসচিব করতে আগ্রহী নন তারেক জিয়া। কারণ তাতে নেতৃত্ব হাত ছাড়া হয়ে যাবে এবং দলের কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে তারেক জিয়া জনপ্রিয় কাউকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করতে চান না। 

জনপ্রিয়তার দৌড়ে এখন মহাসচিব হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন রুহুল কবির রিজভী। যিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। এই নেতা কর্মীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও কর্মীরা মির্জা আব্বাস বা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকেও মহাসচিব হিসেবে পেতে আগ্রহী। কিন্তু এমন একজন মহাসচিবকে তারেক রাখতে চান যিনি মির্জা ফখরুলের মতো একান্ত অনুগত এবং বাধ্যগত থাকবেন। আর এ কারণেই মহাসচিব নিয়ে বিএনপিতে অনিশ্চিয়তা এখনও কাটেনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭