প্রকাশ: 08/04/2024
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চল, বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি এবার রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও দিনে-রাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। আর রাজধানীতে কোনো কোনো এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে উৎপাদন করতে না পারায় এই লোডশেডিং হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিন যত এগোবে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ তত বাড়বে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বর্তমানে গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। সামনে এটি বেড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট হবে। ফলে ঈদের ছুটিতেও গ্রাহকদের লোডশেডিং পোহাতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে। ৩ এপ্রিল সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালুর কথা থাকলেও হয়নি। আজ সোমবার ফের চালুর চেষ্টা করা হবে। টার্মিনালটি চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। তখন লোডশেডিং কিছুটা কমে আসবে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লোডশেডিং নিয়ে বলেন, সামিটের এলএনজি
টার্মিনাল শিগগির আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমে যাবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালাতে চাই না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়ে। গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি সংকট হবে না।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। কয়লা থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বিদ্যুৎ খাতে। তেলচালিত কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও মফস্বল শহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগীয় শহরে দিনে রাতে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর, গ্রিন রোড, পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকাতে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটিতেও লোডশেডিং থাকবে। তবে তা কম হবে।
পিডিবির তথ্যমতে, শনিবার রাত ১২টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৭৫২ মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। রাত ১টায় চাহিদা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। সে সময় লোডশেডিং হয়েছে এক হাজার ৬৩৬ মেগাওয়াট। রাত ২টায় চাহিদা একই থাকলেও উৎপাদন কিছুটা বাড়ায় লোডশেডিং কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৩৭ মেগাওয়াট। রাত ৩টায় চাহিদা আবার বেড়ে হয় ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সে সময় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৫৬১ মেগাওয়াট।
রাত ৪ টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৩৩৫ মেগাওয়াট। এরপর কিছুটা উঠানামা করলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কখনোই এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটের কম লোডশেডিং হয়নি। এর মধ্যে সকাল ৭টায় সর্বনিম্ন এক হাজার ১৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। আর বিকেল ৩টায় তা এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। এরপর আবারও লোডশেডিং কিছুটা কমে।
এর আগে ৫ এপ্রিল শুক্রবারও একই ধরনের চিত্র ছিল। ওই দিন রাত ১২টায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। রাত ১টায় এক হাজার ৬৪৬ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৬৩৪ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার দিনে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। ওই দিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজার মেগাওয়াটের নিচে ছিল লোডশেডিং। রাত ১১টায় তা এক লাফে দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়।
৪ এপ্রিল রাত ১২টায় এক হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই দিন রাত ১টায় এক হাজার ৫২৬ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৩৫৪ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই দিন শুধু সকাল ৮টায় ও সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচে নামে। দুপুর ৩টায় তা দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। একই ধরনের চিত্র ছিল ৩ এপ্রিল। ওই দিন রাত ১২টায় এক হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এ ছাড়া রাত ১টায় এক হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। যদিও ২ এপ্রিল দিনে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। ওই দিন দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় এক হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট। তবে ১ এপ্রিল সারাদিনই লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচেই ছিল। ওই দিন রাত ১১টায় তা হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, রাজধানীতে এসির ব্যবহার বাড়ছে। এতে আমাদের বিতরণ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। ঢাকায় চাহিদার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি। কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭