ইনসাইড বাংলাদেশ

পার্বত্য অঞ্চলকে ঘিরে বিদেশি ষড়যন্ত্র?


প্রকাশ: 08/04/2024


Thumbnail

অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা। আর এই তিনটি জেলা উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পেছনে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ-এর যেমন হাত রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিদেশি ষড়যন্ত্র। আমরা দেখেছি যে, আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক সময় পর্যন্ত পাহাড়ে যে শান্তি বাহিনীর আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিয়েছিল অনেক বিদেশি রাষ্ট্র। 

তারা তথাকথিত মানবাধিকার এবং আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার কথা বলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উস্কে দিয়েছিল। এখন আবার কেএনএফ-এর যে নতুন করে সশস্ত্র তৎপরতা এবং সহিংসতা এর পিছনে রয়েছে সুগভীর বিদেশি ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে এই অঞ্চলে একটি আলাদা পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কোন বিদেশি রাষ্ট্রের মদদে কেএনএফ কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে। 

এ ধরনের প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বান্দরবানের রুমা এবং থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি এবং ব্যাংক ম্যানেজারের অপহরণের ঘটনার সঙ্গে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র যুক্ত বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। কেএনএফ শুধু বিচ্ছিন্ন ভাবে একক শক্তিতে এই ধরনের ঘটনা করতে পারে না এবং এ রকম বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও তৈরি করতে পারে না। এর পিছনে বিদেশি হাত রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি একটি মহল নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম নিয়ে ইস্টার্ন স্টেট গঠনের প্রচেষ্টা করে আসছিল। সেই ইস্টার্ন স্টেটে বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলে বম জনগোষ্ঠী যাদের সবাই খ্রিস্টান তাদেরকেও একীভূত করার চেষ্টা করছিল। কুকি-চিন গ্রুপটা তাদেরই। এই অঞ্চলকে নিয়ে অর্থাৎ নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, এবং পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ অনেক পুরনো এবং নতুন করে এটিকে শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। আর এর পিছনে রয়েছে বিদেশিদের হাত। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। একদিকে ভারতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং অশান্ত করা, অন্যদিকে বাংলাদেশেও অশান্ত এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। যারা এই খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাদের অন্য কোনো মতলব রয়েছে এবং যে মতলব আন্তর্জাতিক একটি হাত রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এই অঞ্চলকে ঘিরে ব্যাপক ভাবে উৎসাহী। এই অঞ্চলের ওপর তাদের চোখ দীর্ঘদিনের। আর এ কারণেই তারা এখন এরকম অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে। 

উল্লেখ্য যে, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর ফলে পাহাড়ের শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ করে এবং আস্তে আস্তে সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু শান্তি বাহিনীর নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার পর এখন নতুন করে কেএনএফ যে সহিংসতা শুরু করেছে তার পিছনে একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে বলেই অনেকে মনে করছে। 

ভারত মহাসাগরকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো চীনের আধিপত্য কমাতে তৎপর। ভূরাজনীতির এমন এক সমীকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে জান্তা বিরোধী গোষ্ঠী সহায়তার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের 'বার্মা অ্যাক্ট' করেছে। ভূরাজনীতিতে এমন প্রতিযোগিতার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগে বাংলোদেশ যুক্ত হয়েছে আগেই। ইন্দো-প্যাসিফিক জোট করে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে চাইছে। বড় শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে গুটি হিসেবে পার্বত্য অঞ্চল ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭