ইনসাইড পলিটিক্স

মেজর হাফিজ: চেয়েছিলেন একশ কোটি টাকা, পেয়েছেন দশ কোটি


প্রকাশ: 08/04/2024


Thumbnail

কিংস পার্টি বিএনএমে যোগ দেওয়ার জন্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন একশ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। তাকে একশ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে তিনিও আর বিএনএমে যোগ দেননি। 

একশ কোটি টাকা খরচ করে মেজর হাফিজকে নেওয়াটা লাভজনক প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করেনি সংশ্লিষ্ট মহল। এ কারণেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আর এর ফলেই মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আর বিএনএমে যোগ দেননি। পরবর্তীতে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। পরবর্তীতে সেই ১০ কোটি নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার দর কষাকষি হয়েছে। এ জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মেজর হাফিজের বিএনএমে যোগদান এবং কে আসল সত্য, কে মিথ্যা তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। উল্লেখ্য, গত বছর জুন মাস থেকে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে বিএনএমের লোকজন যোগাযোগ করতে থাকেন। তারা বিএনএমে যদি মেজর হাফিজ নেতৃত্ব নেন তাহলে সরকারের দিক থেকে তাকে মোটা অঙ্কের সহায়তা দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়। 

বিএমএর পক্ষ থেকে তাকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এই ১০ কোটি টাকা দিয়ে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন দুটি ব্যাংক লোন শোধ করেছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। একটি ব্যাংকে তার ১৬ কোটি টাকা লোনের বিপরীতে তিনি ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণ শোধ করেন। অন্য একটি ব্যাংকে তার ৮ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে তিনি ৩ কোটি   পরিশোধ করেন। তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, বিএনএমে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলে তাকে নির্বাচন এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একশ কোটি টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, বিএনএমে যোগ দেবেন তখন থেকে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের বাসায় বিএনএমের নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করা হতে থাকে। যে সময় সাকিব আল হাসান এসে তার কাছ থেকে সদস্য ফরম জমা দেন, এরকম সময় তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন যে, কখন লোকজন আসবে এবং তাকে বাকি টাকা দেবে। কিন্তু এই সময়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

একটি সূত্র বলছে, সরকার প্রথমে ভেবেছিল যে, বিএনএম বা তৃণমূল বিএনপিকে দিয়ে প্রতিপক্ষ করে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। কিন্তু সারা দেশে মাঠ জরিপ করে দেখা যায় যে, এ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো জন ভিত্তি নাই। এরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাহলেও একতরফা নির্বাচন হবে এবং তাতে সরকারের বদনাম হবে। এরপরই সরকার তার কৌশল পরিবর্তন করেন এবং কৌশল বদলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে উৎসাহিত করার মডেলটি গ্রহণ করে। এর ফলে ঐতিহাসিকভাবেই বিএনএম এবং তৃণমূল বিএনপি সরকারের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। আর এই অপ্রয়োজনীয় খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় কোন প্রয়োজন নেই। বরং সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। এর ফলে গোসা করেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন। আর এই গোসা থেকেই তিনি শেষ পর্যন্ত বিএনএমে যোগ দেননি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুরো বিষয়টি হল টাকা-পয়সা পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব। বাকি ৯০ কোটি টাকা পেলেই মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের বিপ্লবী চেহারা মুখোশ বেরিয়ে যেত এবং তখন তিনি বিএনএম এর নেতা হিসেবে নির্বাচন করতেন।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, একমাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইবরাহিম কোন টাকা পয়সা ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। বাকি যারা নির্বাচন করেছেন তারা প্রত্যেকেই টাকা পয়সার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু সরকার চেয়েছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭