ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গাজায় নেই ঈদের আনন্দ


প্রকাশ: 09/04/2024


Thumbnail

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি হলেও এই ঈদ যেন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসছে না ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা অঞ্চলে। মাসব্যাপী পবিত্র সিয়াম সাধনা শেষে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যখন ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায় তখন নেই গাজা কোন ঈদের আনন্দ।

শোক আর কষ্টের চাদরে ঢাকা পড়ে থাকা গাজায় ঈদের আনন্দ। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় প্রায় পুরো গাজা উপত্যকা যেন এখন এক বিরানভূমি। ছয় মাসে ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছে আরও ৭৬ হাজার ফিলিস্তিনি। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে আরও অনেক মানুষ। ইসরায়েলি হামলা শিগগির বন্ধ বা যুদ্ধবিরতি শুরু হবে সেরকম কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ রকম অবস্থায় বিভীষিকার মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের উদযাপন করতে হবে মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। ওই হামলায় ইসরায়েলে নিহত হন ১ হাজার ১৩৯ জন। এ সময় আনুমানিক ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস সদস্যরা। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আকাশপথে হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানও চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৩,২০৭ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ৭৫,৯৩৩ জন। হামলায় গাজার প্রায় ৬২ শতাংশ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে আরও কয়েক হাজার মানুষ।

ইসরায়েলি হামলা থেকে রেহাই পায়নি বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় এমনকি হাসপাতালও। হাসপাতালে ঢুকে রোগী ও স্বজনদের হত্যা করার মতো বর্বরতাও বাদ দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি হামলার মুখে ত্রাণবাহী কোনো গাড়ি ঢুকতে পারছে না গাজায়। এ ছাড়া ত্রাণ ঢুকতে সরাসরি বাধাও দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ রকম অবস্থায় গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। না খেয়ে ইতোমধ্যে অনেক শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। জুনের মধ্যে পুরোমাত্রায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ। এ বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলেও তা কানে তুলছে না ইসরায়েল সরকার।

গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে ইসরায়েল—এ অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ আদালতে মামলাও হয়েছে। সে আদালতের নির্দেশনাকেও বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। রমজান মাস শুরুর আগে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বেশ সম্ভাবনা জেগেছিল। আশা করা হয়েছিল যে, রমজান মাসটি অন্তত নির্বিঘ্নে কাটাতে পারবেন গাজাবাসী। কিন্তু তা আর হয়নি। রমজান মাসেও রক্তের খেলায় মেতে ওঠে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাস ও ইসরায়েল সরকার দুপক্ষই তাদের দাবিতে অনড় থাকায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি যেন সুদূর পরাহত। হামাসের দাবি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার ছাড়া কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে না তারা। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করা ছাড়া কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবে না তারা। আর এই অনড় অবস্থানের মাঝে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে গাজার নিরীহ সাধারণ মানুষ। তবে গত রোববার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাংশ থেকে হঠাৎ সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর পরই খান ইউনিসে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জোর দিয়ে বলেছে যে, গাজায় একটি নির্দিষ্টসংখ্যক বাহিনী থাকবে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সৈন্যদের ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাকে কৌশলগত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। যুদ্ধ শেষের দিকে চলে যাচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। খান ইউনিসে মাত্র একটি ব্রিগেড রেখে বাকি সব সৈন্য ফিরিয়ে নিয়েছে তেল আবিব। অনেক বিশ্লেষকই এটাকে ইসরায়েলের পিছু হটার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। কারণ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘরে-বাইরে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতার জন্য প্রায় প্রতিদিনই নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে ইসরায়েলে। ইউরোপীয় অনেক মিত্র দেশও নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তাতেও টলছেন না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সর্বশেষ মিশরের রাজধানী কায়রোতে যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতেও এ পর্যন্ত কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। মিশরের সংবাদমাধ্যমে আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ইসরায়েল ও হামাস দুপক্ষই বলছে যে, চুক্তি থেকে তারা এখনো অনেক দূরে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭