ইনসাইড পলিটিক্স

খোকনকে নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত বিএনপি


প্রকাশ: 09/04/2024


Thumbnail

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে কি বহিষ্কার করা হবে, না হবে না—এ নিয়ে বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপির নিয়ন্ত্রিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দলে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছে এবং এই সুপারিশ সংক্রান্ত পত্রটি ইতিমধ্যে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে দেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, এটি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপির অবস্থান ক্ষুন্ন হবে এবং  সামগ্রিক ভাবে পুরো দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্য দিয়ে দলের নেতাদের নেতাকর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। এখন সব কিছু নির্ভর করছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্তের ওপর। তবে শেষ পর্যন্ত যদি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে বিএনপি একটি বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 


উল্লেখ্য যে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও অন্যান্য পেশাজীবীদের নির্বাচনে বিএনপি বয়কট করেছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে। ২০১৮ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি আস্তে আস্তে নির্বাচনে সংস্কৃতি থেকে সরে আসছে। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করে, জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচনকেও বর্জন করে। এই সরকারের অধীনে কোনো অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়—এ রকম একটি ধারণা প্রেক্ষিতেই বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তরুণ আইনজীবীদের আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে তারা নিশ্চিত ছিল যে, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের যে জনপ্রিয়তা, ইমেজ এবং সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের দ্বিধা বিভক্তির কারণে এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে এবং এখানে আওয়ামী লীগকে একটি কঠোর বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আরেকটি তাৎপর্য ছিল। 

নানা কারণে সুপ্রিম কোর্ট স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেওয়া এবং সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করাটা অত্যন্ত জরুরি একটি কাজ বলে বিএনপি মনে করেছিল। এরকম বাস্তবতায় শেষপর্যন্ত অংশগ্রহণ করে বিএনপি সভাপতি সহ চারটি আসনে বিজয়ী হয়। যদিও এই নির্বাচন নিয়ে নানা রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতি হয়েছিল। বিশেষ করে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং তার বাড়াবাড়ি নিয়ে একটি অস্থির অবস্থা তৈরি হচ্ছিল। পরবর্তীতে সেই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সব সম্ভব হয় এবং চূড়ান্ত ভোট গণনায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চারজন বিজয়ী হয়। তারা বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকেই ভোট কারচুপির অভিযোগ এবং পুনর্গণনার দাবি করা হয়। কিন্তু যারা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজখবর রেখেছেন, তারা জানেন যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। এই বাস্তবতায় সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। মূলত তাদের অনুরোধেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হন ব্যারিস্টার খোকন। 


অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে দায়িত্ব না গ্রহণ করার জন্য চিঠি দেয় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে। একদিকে সাধারণ আইনজীবীদের আবেদন অন্যদিকে বিএনপি পন্থী মুষ্টিমেয় কয়েকজন আইনজীবীর নির্দেশনা দুটির মধ্যে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাধারণ ভোটারদের ডাকে সাড়া দেন এবং তিনি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এখন তাকে বহিষ্কার করা নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্টে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। তাকে যদি বহিষ্কার করা হয় তাহলে পুরো দলের মধ্যে একটি ভুল বার্তা যাবে এবং জনপ্রিয় নেতারা নিজেদের গুটিয়ে নেবে বলে অনেকে মনে করেন। এখন নির্ভর করছে তারেক জিয়ার। তবে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা এ ব্যাপারে তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না গ্রহণ করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭