ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন সরকারের তিন মাস: পুরোনো মন্ত্রীদের চেয়ে নতুনরা বেশি উজ্জ্বল


প্রকাশ: 10/04/2024


Thumbnail

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে গত ১১ জানুয়ারি। আগামীকাল নতুন সরকারের তিনমাস পূর্তি হবে। নতুন সরকারের এই তিন মাস সময় ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ছিল চ্যালেঞ্জের মুখে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে নতুন সরকার প্রথম তিন মাস কোন রকম চাপ ছাড়াই দেশ পরিচালনা করছে। 

টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে। এই মন্ত্রিসভায় অনেক চমক ছিল। আবার পুরনো বেশ কিছু মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। দুই দফায় মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। আর এই মন্ত্রিসভায় মোট ৪৭ জন মন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে নতুন এবং পুরোনো মিলিয়ে। পুরোনো অনেককে যেমন একই মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়েছে, অনেকের দপ্তর বদল করা হয়েছে, আবার বেশ কিছু চমক সৃষ্টিকারী নতুন মন্ত্রীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম তিন মাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, পুরোনো মন্ত্রীদের চেয়ে নতুন মন্ত্রীরা ছিলেন অনেক বেশি উজ্জ্বল। তাদের কাজের আগ্রহ বেশি ছিল এবং তারা একটা কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। 

আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার বিশ্লেষণ করলে প্রথম তিন মাসে যে সমস্ত মন্ত্রীদেরকে উজ্জ্বল মনে হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন;

ডা. সামন্তলাল সেন: ডা. সামন্ত লাল সেন ছিলেন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় চমক। বার্ন ইউনিটের দায়িত্ব পালন করা এই সৎ এবং ব্রতী চিকিৎসককে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করাটা সকলের কাছে ছিল একটা বড় ধরনের বিস্ময়। তবে সামন্ত লাল দায়িত্ব গ্রহণ করেই নিজের যোগ্যতা ভালোমতোই প্রমাণ করছেন। এখন পর্যন্ত তিনি সফল না ব্যর্থ তা বলার সময় আসেনি। তবে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের জন্য একটা চেষ্টা করছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছেন। তিনি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন জায়গা অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা, কাজে গাফিলতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে বোঝা যাবে যে, তিনি সফল হচ্ছেন কি না। তবে বর্তমান সরকারের প্রথম তিন মাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ডা. সামন্ত লালের।

আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু এবারই তিনি প্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। প্রথমবার মন্ত্রী হওয়ার পর পরই তিনি নিজের কর্মদক্ষতা, যোগ্যতাকে প্রমাণ করেছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে তিনি অন্যতম উজ্জ্বল মন্ত্রী হিসাবে বিবেচিত হতে পারেন। তিন মাসে তিনি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজের চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে রমজান মাসে সুলভ মূল্যে মাংস, ডিম, দুধ বিক্রির উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নয়নের জন্য তার বিভিন্ন তৎপরতা প্রশংসিত হচ্ছে। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক তার রাজনৈতিক জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন। তবে এবারই তিনি প্রথম পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও তিনি অপেক্ষাকৃত অগুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপরও এই সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমাণ করেছেন যে, একজন রাজনীতিবিদরা যে কোন জায়গাতেই চেষ্টা করে সফল হতে পারেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে তিনি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। তাঁত বোর্ড পুনর্গঠনের জন্য তার উদ্যোগ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে। 

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল: মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রথমবারের মন্ত্রী নন। তিনি ডাবল প্রমোশন পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আগে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। পূর্ণমন্ত্রী হয়ে কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি বেশ সাফলতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার ক্ষেত্রে তার অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন তা সকল মহলে আলোচিত হয়েছে। 

আবুল হাসান মাহমুদ আলী: আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবার প্রথম মন্ত্রী নন। তবে মন্ত্রিসভায় এবার তার অন্তর্ভুক্তি হয়েছে বিরতির পর। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি কেমন করবেন এ নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি যথেষ্ট ভালো করার স্বাক্ষর রাখছেন। বিশেষ করে ব্যাংক একীভূত করা এবং অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার লাগাম টেনে ধরার একটা ইতিবাচক চেষ্টা রয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরী: সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬ সালের মেয়াদে উপমন্ত্রী ছিলেন। এবার তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করার চেষ্টা করেছেন। তাকে মন্ত্রণালয়ের কাজে উজ্জ্বল এবং আলোকিত লাগছে। বিশেষ করে জলরায়ু পরিবর্তন ইস্যুকে নিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থানকে তুলে ধরার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তার ফল বাংলাদেশ ভবিষ্যতে পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ এ আরাফাত: তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি বেশ উজ্জ্বল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের কাজে তিনি একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। কথা বেশি না বলে কাজের ব্যাপারে তার মনোযোগ বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। 

এছাড়াও মন্ত্রিসভার বেশ কিছু সদস্যদেরকে উজ্জ্বল লাগছে। তাদের মধ্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী উল্লেখযোগ্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭