ইনসাইড বাংলাদেশ

মন্ত্রিসভায় অনুজ্জ্বল মন্ত্রীরা


প্রকাশ: 10/04/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছে, সেই মন্ত্রিসভার মেয়াদ আগামী কাল তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে। মন্ত্রিসভার মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গতবারের চেয়ে এবারের মন্ত্রিসভায় মধ্যে উদ্যম বেশি, কাজের আগ্রহ বেশি, বিতর্ক সৃষ্টি প্রবণতাও কম। কিন্তু এই মন্ত্রিসভার মধ্যে কয়েক জন মন্ত্রী রয়েছেন যারা অনুজ্জ্বল। তাদেরকে খুব একটা পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে না।  প্রথম তিন মাসে তো নয়, প্রথম তিন মাসে তাদের মধ্যে উদ্যমের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উদ্ভাবনী এবং জনকল্যাণের কার্যক্রমের ব্যাপারে তাদের তৎপরতার ক্ষেত্রেও একধরনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

যে সমস্ত মন্ত্রীদের উদ্যম কম বলে সাধারণ মানুষের কাছে মনে হচ্ছে, যে সমস্ত মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভায় অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল তাদের মধ্যে রয়েছেন;

আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক: আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠতম মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পরেই তার অবস্থান। কিন্তু টানা দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রী হওয়ার পরও তাকে মন্ত্রিসভায় খুব একটা উজ্জ্বল লাগছে না। বরং তিনি মুক্তিযুদ্ধের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা সে বিশৃঙ্খলা এখন পর্যন্ত দূর করতে পারেনি। তাছাড়া মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির তিনি সভাপতিত্ব করতে গিয়ে ৯ এপ্রিল ছুটির দিন করেছিলেন, যা প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে নাকচ করে দিয়েছেন। আ. ক. ম. মোজাম্মেলকে তেমন উজ্জ্বল এবং উদ্দীপ্ত মনে হচ্ছে না।

মুহাম্মদ ফারুক খান: মুহাম্মদ ফারুক খান এবার বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শুরুতে তিনি একটু সপ্রতিভ থাকলেও আস্তে আস্তে তাকে ম্লান এবং অনুজ্জ্বল লাগছে। মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বের বাইরে তিনি খুব একটা তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। অথচ এসময় বেসামরিক বিমান চলাচলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে থার্ড টার্মিনাল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ আছে। এখানে মন্ত্রীকে মনে হচ্ছে ম্লান ম্রিয়মাণ। 

ডা. দীপু মনি: ডা. দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রী থেকে এবার সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে তিনি সম্ভবত সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আর এই কারণেই মন্ত্রণালয়ের কাজে তাকে এখন পর্যন্ত উজ্জ্বল উদ্যমী লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এর আগে দুবার পররাষ্ট্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকার সময়ে শুরু থেকেই তাকে যে রকম তৎপর দেখা গিয়েছিল, এবার ততটাই তিনি ম্রিয়মাণ। তার এই মৌনতা কারও দৃষ্টি এড়ায়নি। 

আব্দুস সালাম: এবার পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে চমক জাগিয়ে ছিলেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম। প্রথম দিকে তাকে কিছু কর্মকাণ্ডে দেখা গেলেও এখন তিনি অনেকটাই ম্লান এবং ম্রিয়মান। বিশেষ করে এখানে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীকেই বেশি উজ্জ্বল লাগছে আব্দুস সালামের চেয়ে।

ইয়াফেস ওসমান: ইয়াফেস ওসমান সব সময় নীরবে নিভৃতে থাকেন। তিনি সম্ভবত নিজেই অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করেন। পাদপ্রদীপে আসতে চান না। এবার তিনি রেকর্ড বারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া যে রেকর্ড কারও নেই। কিন্তু এবারও তিনি যথারীতি সবকিছুর বাইরে এবং তাকে কদাচিৎ দেখা যায়। তিনি খুব একটা গণমাধ্যমের সামনে আসেন না। তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জনগণ খুব একটা অবহিত নন। 

নারায়ন চন্দ্র চন্দ: বর্তমানে মন্ত্রিসভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্রকে। তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে কেমন করবেন সেটা অনেকে দেখার অপেক্ষায় ছিল। কারণ এর আগেরবার যিনি ভূমিমন্ত্রী ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সফল ভাবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে একটি আলোচিত মন্ত্রণালয় হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। সেই তুলনায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এখন পর্যন্ত অনুজ্জ্বল। তাকে খুব একটা তৎপর এবং উদ্যমী হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না। 

ফরহাদ হোসেন: জনপ্রশাসন মন্ত্রী এবার পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু পদোন্নতি হওয়ার পর তিনি যেন আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আটকে গেছেন। অনেকগুলো ইস্যুতে তার অবস্থান সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয় এবং সম্পদের হিসাব তালিকা প্রকাশ করা এটি আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অঙ্গীকার। এটির ব্যাপারে তার অবস্থান কি এবং প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং মেধার পালন বিষয়ে এখন আমলাদের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে তিনি কিভাবে আমলাতন্ত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন সেটি দেখার বিষয়। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার উদ্যোগ বা ভূমিকা তেমন একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এছাড়াও মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু সদস্যের উপস্থিতি অত্যন্ত ম্লান, ম্রিয়মান এবং অনুজ্জ্বল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭