ইনসাইড পলিটিক্স

একদা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের এই নেতাদের ভবিষ্যত কী?


প্রকাশ: 12/04/2024


Thumbnail

এক সময় তারা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত ছিলেন। একাধিকবার দলের কঠিন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন যথাযথভাবে। কিন্তু এখন তারা দলের ভিতর নানা কারণে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছেন। দলে তাদের গুরুত্ব আগের চেয়ে কমে গেছে। এই সমস্ত নেতাদের যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কঠিন সময়ে এরা দলের জন্য কাজ করেছেন। অনেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। এই সমস্ত নেতাদের আওয়ামী লীগের ভেতর এক ধরনের প্রভাব বলয় রয়েছে। তারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় এবং কর্মহীন। তাদের ভবিষ্যত কী—এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরে নানামুখী আলাপ আলোচনা হচ্ছে। এ সমস্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন;

আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ: আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবার বরিশাল-১ আসন থেকে আবারও জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী একজন নেতা। বরিশালের রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তবে গত কিছু দিন ধরে রাজনীতিতে তার ভাল সময় যাচ্ছে না। বিশেষ করে তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ গত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। রাজনীতিতে এটি তার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। ওই মনোনয়ন বোর্ডের সভায়  আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ বাহাস হয়েছে। এরপরও তিনি তার পুত্রকে মনোনয়ন এনে দিতে পারেননি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর প্রভাব বলয় এখন রাজনীতিতে অনেকটাই কমে গেছে। রাজনীতিতে তিনি এখন অনেকটা একাকী বলে ধারণা করা হচ্ছে। বয়সে প্রবীণ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ক্ষত নিয়ে থাকা এই নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন অন্তিম প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া: মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে একজন নেতা ছিলেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করার পেছনে মায়ার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ২০১৮ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এবার তিনি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বটে, কিন্তু দলে তিনি যেন অপাংক্তেয়। অনেকের ধারণা করেছিলেন, তিনি মন্ত্রী হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিত্ব পান নাই। এখন প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে অন্যদের মতো তাকে প্রভাবশালীও মনে করা হয় না। রাজনীতিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কি কোণঠাসা হয়েছেন—এই প্রশ্ন আওয়ামী লীগের অনেকের। 

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম: অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এক-এগারো সময় পাদপ্রদীপে আসার নেতা। আওয়ামী লীগের কঠিন এই সময়ে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে উজ্জ্বল অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। আইনজীবী হিসেবেই শুধু নয়, সাংগঠনিকভাবে তিনি সংস্কারপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আর এই কারণেই তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ২০০৯ এবং ২০১৪ এই দুটি মন্ত্রিসভাতেই তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও তিনি অন্তর্ভুক্ত। তারপরও অনেকেই মনে করেন যে, অ্যাডভোকেট কামরুলের আগের প্রভাব প্রতিপত্তি আওয়ামী লীগের নেই। বিশেষ করে এক-এগারোর পর তার যে উত্থান ঘটেছিল সেই প্রভাব এখন অনেকটাই খর্ব হয়ে গেছে। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন। 

শাজাহান খান: শাজাহান খান আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। বিশেষ করে পরিবহন সেক্টরের কারণে তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কিন্তু মাদারীপুরের রাজনীতিতে তিনি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অনেকে মনে করে। এবার মন্ত্রিসভাতে তিনি অন্তর্ভুক্ত হননি। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। রাজনীতিতে তার প্রভাব কমে গেছে। তবে পরিবহন সেক্টরে তার আধিপত্যের কারণে রাজনীতিতে তার গুরুত্ব এখনও কমেনি বলেই অনেকে মনে করেন। 

সাঈদ খোকন: মেয়র হানিফের পুত্র হিসেবেই সাঈদ খোকন অত্যন্ত পরিচিত। মেয়র হানিফের অবদান আওয়ামী লীগে অনস্বীকার্য। আর এ কারণেই ২০০৭ সালে সংস্কারপন্থি হওয়া কিংস পার্টিতে যাওয়ার পরও সাঈদ খোকন এখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেঁচে আছেন। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর মনোনয়ন পাননি। এবার শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। কাজী ফিরোজ রশীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন সাঈদ খোকন এখনও তার প্রিয়ভাজন ব্যক্তি। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি নিজের অবস্থানে সংহত নন। অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থানে আছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এই সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী তা সময়ই বলে দেবে। কারণ রাজনীতি এমন একটি বিষয় যেখানে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত একজন রাজনৈতিক নেতাকে বহুদূর এগিয়ে নেয়। আবার একটি ভুল সিদ্ধান্ত তাকে পিছিয়ে দেয় অনেক খানি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭