ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনীতিতে তরুণ সম্ভাবনারা কেন হারিয়ে যায়


প্রকাশ: 12/04/2024


Thumbnail

রাজনীতিতে কিছু তরুণ এসেছিলেন অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে। শুরুতে তারা সাড়া ফেলেছিলেন, আলোচিত হয়েছিলেন এবং তরুণদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণও দিয়েছিলেন। কিন্তু যত গর্জে তত বর্ষে না। যেভাবে তারা শুরুটা করেছিলেন সেভাবে তাদের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি। 

কেন তারা রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়লেন বা মূলধারা থেকে ছিটকে পড়লেন—এই নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করতেই পারেন। তবে রাজনীতিতে অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও যারা নিভু নিভু এবং যারা মূলধারা থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছেন, তাদের কয়েক জনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন;

মাহি বি চৌধুরী: মাহি বি চৌধুরী ২০০১ সালে অন্যতম আলোচিত তরুণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। বিশেষ করে ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপির ভূমিধস বিজয়ের পিছনে মাহি বি চৌধুরীর ভূমিকার কথা বিএনপির মধ্যে আলোচিত হত। তারেক জিয়ার পরই জনপ্রিয় তরুণ নেতা হিসেবে মাহির প্রশংসা করা হত বিএনপির মধ্যেও। সংসদেও তিনি চমক জাগিয়ে ছিলেন। সেই সময় নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে তার নির্বাচনী এলাকায় তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু তার পিতার সিংহাসন চ্যুতির পর তিনিও বিচ্যুত হন। জাতীয় সংসদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। এরপর তার রাজনীতি টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে। বরং ব্যক্তিগত ভাবে দুর্নীতি এবং নানা রকম অনিয়মের কারণে রাজনীতিতে তিনি মূলধারা থেকে ছিটকে পড়ে গেছেন। বিকল্প ধারার রাজনীতির গতিপ্রকৃতি, অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বচ্ছ। কখনও বিএনপির সঙ্গে ঐক্য, আবার কখনও আওয়ামী লীগের সাথে মহাজোট এরকম নানা রকম বিভ্রান্তিকর নীতি মাহি বি চৌধুরীকে রাজনীতির মূল ধারা থেকে ছিটকে দিয়েছে। এখন তিনি রাজনীতিতে থেকেও নেই।

আন্দালিব রহমান পার্থ: আন্দালিব রহমান পার্থ একজন তরুণ সম্ভাবনাময় মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে শুরুতে আলোচিত হয়েছিলেন। তার পিতা নাজিউর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই সূত্রে রাজনীতিতে এসে ২০০৮ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি চমক সৃষ্টি করেছিলেন। শুধু চমক নয়, জাতীয় সংসদে তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টে হিসাবে নিজেকে উপস্থাপনের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর বিএনপির সঙ্গে জোট আবার বিএনপি জোট থেকে ২০১৮ নির্বাচনের পর বেরিয়ে যাওয়া, একক ভাবে রাজনীতি করার চেষ্টা করা ইত্যাদি নানা রকম সিদ্ধান্ত আন্দালিব রহমান পার্থকে রাজনীতির মূলধারা থেকে ছিটকে দিয়েছে। যদিও টকশো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এখনও জনপ্রিয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা টকশো কখনও মূলধারার রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে না। আন্দালিব রহমান পার্থর যে প্রতিভা সেই প্রতিভার অপচয় হচ্ছে। তার রাজনৈতিক দলটি এখন অনালোচিত। মূলধারার রাজনীতি থেকে তিনিও এখন অনেকটাই ছিটকে পড়ে গেছেন। 

নুরুল হক নুর: ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরও অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ সমাজের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেন। এই রাজনৈতিক দল নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি। অনেকেই মনে করেন, সরকারের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্ক আবার সরকারের সমালোচনা তিনি করেন। তার নিজের দলের ঐক্য তিনি রাখতে পারেননি। রেজা কিবরিয়াকে তার দলে নিয়ে তিনি এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। রাজনীতিতে টালমাটাল এবং এলোমেলো নুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যতও এখন উদভ্রান্তের মত দিকভ্রান্ত।

গোলাম মাওলা রনি: গোলাম মাওলা রনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসেছিলেন বেশ সম্ভাবনা নিয়ে। তিনি আইনের ছাত্র এবং তরুণ। তার কথাবার্তার মধ্যে এক ধরনের কৌতুক এবং রসবোধের জন্য তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা পান। লেখালেখি করেও তিনি সাধারণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু রাজনীতিতে বিচ্যুত এবং বিভ্রান্তদেরকে যে সাধারণ মানুষ প্রত্যাখান করে গোলাম মাওলা রনি তার প্রমাণ। তিনি এখন যতটা না রাজনীতিবিদ তার চেয়ে বেশি টকশো বাগীশ। লেখালেখির দিক থেকেও তিনি এখন তেমন আলোচিত নন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে বটে। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি মৃত প্রায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭