ইনসাইড পলিটিক্স

হাজার ইফতারি, শত কোটি টাকা খরচ করে কী পেল বিএনপি?


প্রকাশ: 13/04/2024


Thumbnail

এবার বিএনপি রেকর্ড পরিমাণ ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। বিএনপি হিসাব অনুযায়ী, ১৩১৭ টি ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে দেশজুড়ে। এই হাজার ইফতারিতে খরচ হয়েছে শত কোটি টাকারও বেশি। পাঁচ তারকা হোটেল গুলোতে ইফতার হয়েছে অন্তত ১০ টি। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যয়বহুল ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি। 

এবার ইফতার পার্টি ছিল বিএনপির সাংগঠনিক কর্মসূচির একটি অংশ। সংগঠনকে পুনরুদ্ধার করার জন্য, নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা করার জন্যই এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল এবং এই জন্যই খরচ করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ টাকা। এই ইফতার পার্টির নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল, অনেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, চাঁদাবাজির এক উৎসবে মেতে ছিল বিএনপি নেতারা। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, বিএনপি তিনটি কারণে এবার ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। প্রথমত, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবার ইফতার পার্টি না করার নীতি ঘোষণা করেছিলেন, বলেছিলেন যে ইফতারের অর্থ যেন গরিব দুঃখীদের মাঝে খাবার বিতরণ করে ব্যয় করা হয়। এই জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধাচরণ করার নীতি থেকে জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল।

দ্বিতীয়ত, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির যে মনোবল ভেঙে গিয়েছিল, সংগঠনের মধ্যে হতাশা এবং নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য ইফতার পার্টির মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙ্গা করার একটা চেষ্টা ছিল। 

তৃতীয়ত, এই ইফতার পার্টির মাধ্যমে বিএনপি জনসংযোগ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। 

কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ইফতার পার্টির আয়োজন বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়েছে। এর ফলে বিএনপির লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে। 

প্রথমত, এই ইফতার পার্টি আয়োজন করে বিএনপি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক মনোভাব এবং ভাবমূর্তি নিয়ে সামনে এসেছে। কারণ যে দলটি ক্ষমতার বাইরে, তারা এখনই ইফতার পার্টির নামে যেভাবে চাঁদাবাজি করেছে তা সাধারণ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে নেতিবাচক ধারণা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, যারা ক্ষমতার বাইরে থেকে এরকম চাঁদাবাজি করে ক্ষমতায় আসলে না জানি কী করবে। এটি বিএনপির জন্য ইতিবাচক হয়নি। 

দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি ইফতার পার্টি আয়োজন করেছিল। কিন্তু এটি হিতে বিপরীত হয়েছে। বিএনপির মধ্যে অনেকেই বলেছে, যখন দলের একাধিক নেতা জেলে, অনেক নেতার বাসায় অভাব অনটন, সেই সময় এই ইফতার পার্টির আয়োজন এক ধরনের বিলাসিতা এবং যে সমস্ত নির্যাতিত নেতাকর্মী আছে তাদের সাথে প্রতারণার নামান্তর। এটি বিএনপির মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। সংগঠনের কর্মীরা এটিকে ভালভাবে নেয়নি।

তৃতীয়ত, ইফতার পার্টির নামে অনেক সিনিয়র নেতা চাঁদাবাজি করেছেন এবং নিজেদের পকেট ভরিয়েছেন বলেও নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। যেখানে অনেক কর্মীর বাসায় উনুন জ্বলেনি, তাদের সামান্য খাওয়া দাওয়া ভোগাড় করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে তখন বিএনপির ইফতার বিলাশ সাধারণ কর্মীদেরকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সব কিছু মিলিয়ে এই ইফতার পার্টি বিএনপির জন্যই একটি নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

বিএনপির একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন যে, তারেক জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী এই ইফতার পার্টিতে বিএনপির লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। আর এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার এখন উপায় কি সেটি নিয়েই বিএনপিকে ব্যস্ত থাকতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭