ইনসাইড পলিটিক্স

আন্দোলন না সংগঠন: কোন পথে যাবে বিএনপি?


প্রকাশ: 14/04/2024


Thumbnail

বিএনপি কী এখন সংগঠন গোছাবে না সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করবে—এ নিয়ে বিএনপি এখন সিদ্ধান্তহীনতায়। দলের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেও কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। একদিকে সংগঠনের হতশ্রী অবস্থা, নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, তাদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে হতাশা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য একটা তাগিদ রয়েছে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি কী করবে তা নিজেরাই ঠিক করতে পারছে না। 

ঈদের ছুটিতে বিএনপির নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। তাদের মধ্যে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। বিএনপির মধ্যে আন্দোলন এবং সংগঠন কোনটা আগে— এ নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ নিয়ে ৩ ভাগে বিভক্ত। 

বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই মনে করছেন যে, সবার আগে সংগঠন গোছানোর দরকার, সর্ব প্রথমে দরকার দলের একটি কাউন্সিল অধিবেশন করা এবং কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে কর্মক্ষম মাঠের নেতাদেরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা। যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। সংগঠন গোছানো ছাড়া আন্দোলন করলে আবার তা মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই মনে করছেন বিএনপির এই অংশের নেতারা। তারা বলছেন যে, স্থায়ী কমিটির সহ মাঠ পর্যায়ের তৃণমূলের নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে এবং এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটি নতুন আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব। 

তবে বিএনপির একটি অংশ এই মতের সাথে একমত নন। তারা মনে করছেন যে, দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। জেলে অনেকে পলাতক জীবনযাপন করছেন। এরকম অবস্থায় কাউন্সিল করা অযৌক্তিক হবে এবং সংগঠন যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় রেখে আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে হবে। বিএনপির এই অংশের নেতারা মনে করেন যে, জনগণ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট নয়, আন্দোলনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। শুধু দরকার কিছু সঠিক দিক নির্দেশনা এবং নেতৃত্ব। 

আর বিএনপির তৃতীয়াংশের নেতারা মনে করছেন, আন্দোলন এবং সংগঠন দুটি পাশাপাশি চলা উচিত। এক দিকে যেমন সংগঠনে শূন্যস্থানগুলো দ্রুত পূরণ করা দরকার, অন্যদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখা দরকার। এই অংশের নেতারা মনে করছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নতুন নির্বাচনের দাবির চেয়ে এখন জরুরি জন গুরুত্ব সম্পন্ন বিষয়গুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া উচিত। যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, অর্থ পাচার, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদি এই সমস্ত বিষয়ে আন্দোলন করে জনসম্পৃক্ততা অর্জন করা প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেই তারা মনে করছেন৷ 

তবে বিএনপির মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় যে ইস্যুটি দাঁড়িয়েছে তা হলো, কে বিএনপির হাল ধরবেন। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে নেই বললেই চলে। এমনকি ঈদের দিন তিনি যে সিনিয়র নেতাদের ডেকে ছিলেন সেখানেও তিনি কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি। 

বিএনপি দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। তিনি তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দলকে ব্যবহার করেন। তার টাকা পয়সা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আদায়ই প্রধান লক্ষ্য। বিএনপির তৃতীয় প্রধান নেতা যিনি মাঠে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ এবং তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। 

এরকম অবস্থায় বিএনপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতাই এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেটি বিএনপির প্রধান সংকট। আর একারণেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, আগে তাদেরকে একজন সঠিক নেতা নির্বাচন করতে হবে। সেই নেতার নেতৃত্বে তারা আন্দোলন করবে। তবে বিএনপির প্রায় সব নেতাই স্বীকার করছেন যে, আন্দোলনের সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে নির্বাচনের দাবি বা সরকার পতনের আন্দোলন সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আর একারণেই বিএনপি মনে করছে, তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে কঠিন সময়ের জন্য। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭