ইনসাইড বাংলাদেশ

আমলাদের সম্পদের হিসেব দেয়ার কী হল?


প্রকাশ: 14/04/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার গত মেয়াদে ঘোষণা করেছিল যে, সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই বাধ্যবাধকতা প্রতিপালিত হচ্ছে না। 

২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম গিয়েছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সফরে এবং সেখানে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদেরকে নিষ্ঠার সঙ্গে, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ইতোমধ্যে অনেক বাড়ানো বাড়ানো হয়েছে। কাজেই তাদের দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হবে না। 

আওয়ামী লীগ সরকার তার তৃতীয় মেয়াদের শেষ দিকে এসে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপর দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমলারা তাদের সম্পদের হিসেব দিচ্ছেন না। যদিও এ ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, যে কোন ব্যক্তি তার আয় ব্যয়ের বিবরণী আয়কর রিটার্নে জমা দিয়ে থাকেন। আয়কর রিটার্নে সব সম্পত্তির হিসাব দেওয়া থাকে। কাজেই নতুন করে সম্পত্তির হিসাব দেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা এটাও বলেন যে, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান যে নিয়মটি করেছিল সেটি এখনকার সময়ে প্রযোজ্য নয়। এখন আয়কর বিবরণীতে পুংখানুপুংখ ভাবে সব কিছু উল্লেখ করতে হয়। কাজেই সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়াটা অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত। 

তবে অন্যান্য মহল থেকে বলা হয় যে, এটি আমলাদের আরেকটি কৌশল। আয়কর বিবরণীতে যেটি দেয়া হয় সেটির কোন প্রকাশ্য দলিল নয় এবং এই তথ্যগুলো এক গোপনীয় তথ্য। আয়কর দেয়ার ক্ষেত্রে এনবিআর এই তথ্যগুলো গ্রহণ করে যা জনসমক্ষে উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু একজন আমলা তার চাকরি জীবনের শুরুতে তিনি কী পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিলেন এবং প্রতি ধাপে ধাপে তার কী পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি পেল সেই হিসেবটি সাধারণ মানুষের জানা উচিত। এবং যখন একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার সম্পদের বিবরণী দেবেন, এক মাসে তিনি উপার্জন করলেন সেটি দিবেন তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে যে, তার সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ছে।

অবশ্য কেউ কেউ বলে থাকেন যে, সরকারি কর্মকর্তারা পূর্ণকালীন চাকুর। সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কিছু করার এখতিয়ার তাদের নেই। কাজেই তারা যে বেতন এবং অন্যান্য ভাতাদি পান সেটি তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। তবে প্রশ্ন ওঠে অন্য জায়গায়, একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি আয়ের উৎস শুধুমাত্র তার বেতন ভাতাই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের এত বিপুল সংখ্যক সম্পদ হয় কীভাবে? কীভাবে তারা বিদেশে বাড়িঘর কেনেন? বিদেশে সম্পদ করেন? 

সাম্প্রতিক সময়ে একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হিসেব নিয়ে হৈ চৈ চলছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা তার আয়কর বিবরণী দিয়েছিলেন সেই আয়কর বিবরণীতে তিনি এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই সম্পদ প্রাপ্তির উৎস কী তা জানিয়েছিলেন নাকি সেটি যেমন জনসমুখে প্রকাশ করা দরকার তেমনি ঊর্ধ্বতন আমলারা কীভাবে এই বিলাশ বহুল জীবন যাপন করেন, তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠান সেই সব বিষয়গুলো নিয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন। 

আয়কর বিবরণীতে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী যে হিসেবে দেন তার মধ্যে অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত অনেক সম্পদের মালিক প্রায় সব উধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাই। আর এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং নীতিমালা তৈরি করা উচিত বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭