ইনসাইড গ্রাউন্ড

আইপিএলের নিলামে দারুণ, পারফরম্যান্সে করুণ তারা


প্রকাশ: 15/04/2024


Thumbnail

বিশ্বের ঘরোয়া ক্রিকেটের যতগুলো আসর রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যয়বহুল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। প্রতিবছর আইপিএল আসলেই পুরো ভারতজুড়ে যেন এক উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটের এই জাকজমকপূর্ণ আসর মানেই হচ্ছে অর্থের ঝনঝনানি, ক্রিকেটের সঙ্গে বাণিজ্যের বন্ধন।

প্রতি বছরেই আইপিএলে দেখা যায় বিপুল অর্থের ছড়াছড়ি। মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করেই দলগঠন করে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। সঙ্গে থাকে যাতায়াত, হোটেল, খাবারসহ আরও বিভিন্নমুখী খরচ। সেই তুলনায় অবশ্য আয়ও হয় দারুণ।

তবে প্রতিটি আসরে একটি বিষয়ে সবার নজর থাকে, সেটি হচ্ছে সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়। যুবরাজ সিং থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, অ্যারন ফিঞ্চ থেকে মিচেল স্টার্ক—কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায় বিক্রি হওয়া এসব খেলোয়াড়রা নিলামে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। কিন্তু নিলামে তারা মিলিয়নিয়ার হলেও মাঠের পারফরম্যান্সেও কি তারা তাদের জায়গা ধরে রাখতে পেরেছেন?

এবারের আসরের নিলামে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। ২৪ কোটি ৭৫ যার এক একটি বলের মূল্য ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৭ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার এই সর্বজয়ী তারকাকে নিলাম ইতিহাসের রেকর্ড ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী বোলারের পেছনে এত টাকা ঢেলে শাহরুখ খানের দল ভুল করেছে কি না, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ স্টার্ক এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ১১.০০ ইকোনমি রেটে রান বিলিয়েছেন, উইকেট নিয়েছেন মাত্র দুটি।

প্রথম দুই ম্যাচে তো বোলিংয়ে তাকে বেদম পিটুনি খেতে দেখে (৪ ওভারে ৫৩/০ ও ৪ ওভারে ৪৭/০) গড়পড়তা মানের বোলার মনে হচ্ছিল। সে তুলনায় পরের ২ ম্যাচে কিছুটা ভালো করেছেন (৩ ওভারে ২৫/২ ও ৩ ওভারে ২৯/০)। কিন্তু স্টার্কের পেছনে কলকাতা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তাতে তার কাছে একাধিক ম্যাচ জেতানো স্পেল আশা করা দোষের কিছু নয়। আগামী ম্যাচগুলোয় স্টার্ক নিজের মূল্য বোঝাতে পারবেন কি না, সময়ই বলে দেবে। যদি তা না পারেন, তাহলে নিশ্চয় আইপিএল ইতিহাসের ‘সুপার ফ্লপ মিলিয়নিয়ার’ হয়ে থাকবেন।

আইপিএলের সাম্প্রতিক আসরগুলোর দিকে নজর দিলে অবশ্য স্টার্ককে খুব একটা দোষী বলা চলে না। সবশেষ কিছু আসর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাড়তি দামে নেয়া ক্রিকেটাররাই হতাশ করেছেন বেশি। যেন উচ্চমূল্য আর প্রত্যাশার চাপেই নুইয়ে পড়েছেন তারা।

২০২০ আইপিএলের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার ছিলেন প্যাট কামিন্স। সেবার সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে কলকাতা নাইট রাউডার্সই কিনে নেয় তাকে। তবে শাহরুখ খানের দলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের পারফর্ম্যান্স ছিল একেবারেই গড়পড়তা। প্রথম ৫ ম্যাচে সাড়ে ১৫ কোটির কামিন্স ছিলেন উইকেটশূন্য। যদিও দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। পরে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে নিয়েছিলেন আরও ২ উইকেট।

সর্বসাকূল্যে ১৩ ম্যাচে তাঁর উইকেট ৮টি। ব্যাট হাতে অবশ্য মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস তার মান রক্ষা করেছিল। কিন্তু সে আসরের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার মোটাদাগে ব্যর্থই ছিলেন। এমনকি এবারের আসরেও তাকে হায়দ্রাবাদ কিনেছে ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে। সেখানেও খুব একটা সফল না কামিন্স।

২০২০ আইপিএলে একইরকম ব্যর্থতা দেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। মারকুটে ব্যাটার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন লাইমলাইটে। ১০.৭ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে তাদের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। কিন্তু সেবার ১৩ ইনিংসে মোটে ১০৮ রান করেছিলেন তিনি।

আইপিএলের সবচেয়ে দামী তারকা হয়েছিলেন স্যাম কারানও। ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ রুপির রেকর্ড মূল্যে তাকে দলে নিয়েছিল পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু সেই আসরে ব্যাট হাতে ১ ফিফটির সঙ্গে ২৭৬ রান করলেও বল হাতে ১৪ ম্যাচে মোটে ১০ উইকেট নিতে পেরেছিলেন এ ইংলিশ ক্রিকেটার।

তার আগে যিনি আইপিএলের দামী ক্রিকেটার ছিলেন, সেই ক্রিস মরিসও দামী ক্রিকেটারের ছাপ রাখতে পারেননি। ২০২১ আইপিএলের নিলামে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রূপি দিয়ে ক্রিস মরিসকে কিনেছিল রাজস্থান রয়্যালস।

তবে সে আসরে বল হাতে ১৫ উইকেট নিলেও ইকোনমি রেট ছিল ৯.১৭। আর ব্যাট হাতে ১১ ইনিংসে মোটে ৬৭ রান যোগ করতে পেরেছিলেন প্রোটিয়া এ ক্রিকেটার। এমনকি ওই আসরের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার ক্রিস মরিস এরপর আর আইপিএলেই খেলার সুযোগ পাননি।

এ ছাড়া পরিচিতি খেলোয়াড়দের মধ্যে চড়া দামে বিক্রি হওয়া হার্দিক পান্ডিয়া, মোহাম্মদ সিরাজ, শিখর ধাওয়ান, মিচেল মার্শরা এখন পর্যন্ত নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ১০ কোটি রুপিতে গুজরাট টাইটানসে বিক্রি হওয়া অস্ট্রেলিয়ান পেসার স্পেনসার জনসনের পারফরম্যান্সও আশাব্যঞ্জক নয় (৪ ম্যাচে ৯.২১ ইকোনমি রেটে ৩ উইকেট)। সবচেয়ে দামি ১০ খেলোয়াড়ের তালিকায় থাকা রাইলি রুশো (৮ কোটি রুপি) তো এখনো খেলারই সুযোগ পাননি। ৭ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে বিক্রি হওয়া রোভম্যান পাওয়েল গত রাতে প্রথমবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭