প্রকাশ: 17/04/2024
গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি
রিপোর্টে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে। ২০০০ সালের পর থেকে এ সূচকে
২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৬, এখন ১৬৪ দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের
অবস্থান ১৪১তম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘স্বাধীনতাবঞ্চিত’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ৯৯তম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে
‘অসমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে।
ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল
ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আটলান্টিক কাউন্সিলের নতুন
বৈশ্বিক স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি প্রতিবেদন (গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট)-এর
ফলাফল জানাতে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সমৃদ্ধি ও সুশাসন সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকাস্থ মার্কিন
দূতাবাস। সম্মেলনে সরকার, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, দাতা, একাডেমিয়া এবং থিংকট্যাংকের
প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আটলান্টিক
কাউন্সিলের ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি সেন্টারের পরিচালক জোসেফ লেমোইন। তিনি প্রতিবেদনটির
মূল ফলাফল তুলে ধরেন, যা স্বাধীনতা সূচকের মাধ্যমে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক এবং শাসনবিষয়ক
নির্দেশকগুলো পরিমাপ ও ক্রম নির্ধারণ করে এবং সমৃদ্ধি সূচকের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি পরিমাপ করে।
মূল উপস্থাপনায় লেমোনি বলেন, উপাত্ত
বলছে যেসব দেশে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, সেসব দেশে অধিকতর সমৃদ্ধিও দেখা যায়।
অন্যদিকে যেসব দেশে কম স্বাধীনতা রয়েছে,
সেখানে কম সমৃদ্ধি থাকার প্রবণতা রয়েছে। যেসব দেশ শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উৎসাহিত করে, তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি করে স্বাগত
জানায়। এসব দেশ কম স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি বিদেশি
বিনিয়োগ পায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংকটির
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ সমৃদ্ধিতে ভারত-পাকিস্তানকে
ছাড়িয়ে গেলেও পিছিয়েছে স্বাধীনতার সূচকে। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, যেসব
দেশ শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উৎসাহিত করে, তারা বিদেশি
বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি করে স্বাগত জানায়। এসব দেশ কম স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোর তুলনায়
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পায়।
সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতা সূচক সুপারিশ
করে যে, স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মূল অনুষঙ্গ। আবার
সুশাসন বৃহত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। ২০২৩ সালের জন্য করা এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে
৯৯তম।
তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৪৬তম এবং পাকিস্তানের
অবস্থান ১৫০তম। কিন্তু স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম যেখানে ভারত
১০৪তম এবং পাকিস্তান ১১৩তম অবস্থানে রয়েছে। সমৃদ্ধি সূচকের তালিকা করার জন্য স্বাস্থ্য,
বৈষম্য, পরিবেশগত অবস্থা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং শিক্ষাসহ মাথাপিছু জিডিপির মতো বিভিন্ন
কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকের তালিকা করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক
এবং আইনি অবস্থার পরিমাপ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মৌলিক স্বাধীনতা
জোরদার করলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গতিশীল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
জানুয়ারিতে হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থার
দিকে শক্তিশালী পরিবর্তন এসেছে। বিরোধী দলকে বয়কট করে সেটি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে
আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছরের শাসনকাল টিকিয়ে রেখেছে।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান হতে যাচ্ছেন। এটি স্থিতিশীলতার
ইঙ্গিত দিলেও, কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থাগুলো প্রায়ই বিভিন্ন ঝুঁকির মুখোমুখি হয় যা
সুশাসন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য রাজনীতি, সরকারব্যবস্থা এবং
অর্থনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত
পিটার হাস বলেন, প্রতিটি দেশ দুর্নীতির মতো বিষয়ে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার
সুরক্ষিত রাখতে লড়াই করছে। কিন্তু মূল বিষয় সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া নয়, সক্রিয়ভাবে
স্বীকার এবং মোকাবিলা করা।
তিনি আরও বলেন, আটলান্টিক কাউন্সিল
যে ১৬৪ দেশকে তালিকাভুক্ত করেছে সেখানে (স্বাধীনতা সূচকে) ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন’
হিসেবে তালিকাভুক্ত দেশগুলো ‘সমৃদ্ধিশালী’ দেশ হিসেবে (সমৃদ্ধি সূচকে) তালিকাভুক্ত
হয়নি। এটি থেকে বোঝা যায়, সমৃদ্ধিশালী হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক
ও আইনি স্বাধীনতা বৃদ্ধি করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭