ইনসাইড পলিটিক্স

যেসব কারণে পিছু হটল জামায়াত


প্রকাশ: 17/04/2024


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রচার ও গণসংযোগও করছিলেন। বিশেষ করে রোজার মধ্যে এবং ঈদুল ফিতরে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, মূলত বেশকিছু কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত। তার মধ্যে মোটাদাগে চারটি কারণের কথা বলছেন নেতারা।

কারণগুলো হচ্ছে…

১। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে ক্ষমতাসীনদের ‘হস্তক্ষেপ’

২। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পরিবেশের প্রতি জনগণের ‘আস্থার সংকট’

৩। গণতন্ত্র না থাকা এবং

৪। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা না দেওয়া

এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের (সোমবার) আগেই সিদ্ধান্ত বদল করায় জামায়াতের তৃণমূলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন তারা ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছিলেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যায়। নির্বাচনে গেলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এটা ভেবে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাকেও সম্মান জানাতে চান তারা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে সারা দেশে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। বিএনপিও এ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাব আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চলামান রাজনৈতিক ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই গত শনিবার উপজেলা নির্বাচন না করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলে মৌখিকভাবে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে জামায়াতের নেতারা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অসংখ্য রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছে। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব বিষয়কে বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।

গতকাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দিতে যায়নি। তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সেই জনরোষ এখনো আছে। সুতরাং যেসব কারণে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছি না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের প্রতি জামায়াতের দায়বদ্ধতা আছে। দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াত জনমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যেতে পারে না’।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭