ইনসাইড পলিটিক্স

‘ম্যাচিউর ছেলে ভোটের সিদ্ধান্ত নিলে কী করার আছে’


প্রকাশ: 21/04/2024


Thumbnail

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘আমার ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে না’ এই শব্দটা কোন লিঙ্কের মধ্যে এসেছে, কোন কথার মধ্যে এসেছে আমি জানি না। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাপে আমি আমার ছেলেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলি। আমার ছেলে জিতবে কি জিতবে না সেটা বড় কথা নয়। আমি যেহেতু এই এলাকার নির্বাচিত এমপি আমি প্রতিটি জায়গায় উন্নয়ন করে যাব। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমার নির্বাচনি এলাকায় যে উন্নয়ন করেছি তুলনামূলক অন্য আসনগুলোতে কমই হয়েছে। কাজেই আগামী পাঁচ বছরও আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে উন্নয়ন করে যাব’।

তিনি বলেন, ম্যাচিউর ছেলে ভোটের সিদ্ধান্ত নিলে আমার তাকে সমর্থন দিয়ে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে? গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) বেসরকারী এক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী

একরাম চৌধুরী নিজের কাছেই প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এমপি-মন্ত্রীর পুত্ররা ভোট করতে পারবে না। এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে। এ প্রশ্ন অন্য কারও কাছে নয়, আমার নিজের কাছে। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার সন্তান যদি রাজনীতি না করে তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে কারা? রাজাকারের সন্তানরাই কি আওয়ামী লীগকে গ্রাস করে তারাই নেতৃত্ব দেবে আগামী প্রজন্মের? আমার আরেকটি প্রশ্ন। এই আজকে নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাতের বাবা হলেন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। আর তার মা হলো জামায়াতের রোকন। যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সে যে বাড়িতে থাকে সম্পূর্ণ বাড়ি বিএনপির ঘাঁটি। তার আপন আত্মীয়স্বজন, চাচাতো ভাইয়েরা সবাই ছাত্রদল, বিএনপি, যুবদলের সঙ্গে জড়িত। এরাই কি আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে? এরাই কি শেখ হাসিনার পথ? নতুন প্রজন্মের ধারা হবে? এই আমরা যারা আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী তাদের ছেলে-সন্তানরা কি রাজনীতি করতে পারবে না? তারা কি সংবিধানের বাইরে? তারা কি সংবিধানের আওতায় থাকবে না? তাহলে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে? আমার প্রশ্ন এখানে।

আগামীকাল (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত আমি আমার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে বলেছি, আমি খায়রুল আলম সেলিম ভাইয়ের বিচার চেয়েছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেলিম ভাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন। উনি ৩৫ বছর একটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন ওখানকার হিন্দুদের এবং হিন্দু পরিবারের নারীঘটিত ব্যাপারগুলোতে উনি যেভাবে ওখানে শোষণ করেছেন এলাকায় যদি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে রিপোর্ট নেওয়া হয় সবকিছুই জানতে পারবে। নেত্রীর নির্দেশের পরও ২০০০ একরের ওপরে সরকারি জমি এখনো ওনার আয়ত্তে আছে। যা নেত্রীর নির্দেশকে উপেক্ষা করে। আমার মনে হয় ওনাকে একবার ভোট করা উচিত। এই ভোটে আমার ছেলেও প্রার্থী। সেলিমও প্রার্থী। ভোটে যদি আমার ছেলে জিতে এরপর নেত্রী যদি পদত্যাগ করতে বলেন, তাহলে পদত্যাগ করবে। কিন্তু ভোটের রেজাল্ট কী হয় এটা সারা বাংলাদেশ নয়, নেত্রীরও জানা উচিত, আমার নেতা ওবায়দুল কাদের ভাইয়েরও জানা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে একরাম চৌধুরী বলেন, আসলে রাজনীতি করব এমন কোনো চিন্তাভাবনা আমার ছিল না। আমার বাবা রাজনীতিবিদ ছিলেন। আমি ছিলাম ক্রীড়াঙ্গনের লোক। ক্রীড়াঙ্গনে থাকাকালীন পায়ের হাঁটুতে ব্যথা পাওয়ায় থমকে যায় খেলাধুলার পথচলা। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী জগতে ফিরে যাই। আমার বাবার সঙ্গে একসময় আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের ভুল বোঝাবুঝি হয়। এর সূত্র ধরেই আমার রাজনীতিতে প্রবেশ কিংবা পথচলা। আমি সে সময় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি নেতা মওদুদ সাহেবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটে অংশগ্রহণ করি। ফলাফল আমার খুবই ভালো ছিল। কিন্তু সেবার ভাগ্য সহায় হয়নি। জয়ী প্রার্থী হতে পারিনি। সে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। সারা দেশে ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতন, বিএনপি-জামায়াতের নেতারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন শুরু করে। সে সময় আমার নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে নেন। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে স্থান দেন।

বেশ কয়েকদিন পর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আমি অনুধাবন করি- নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের অবস্থা খুবই করুণ। আওয়ামী লীগের অবস্থা এতটা নিম্ন পর্যায়ে ছিল যে, বড়রা তো সমর্থন করতই; এমনকি ছোট শিশুটির মুখেও ছিল বিএনপির নাম। আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন আমি ১০ জন লোককেও পাশে পেতাম না। মিছিল-মিটিংয়ে সমর্থক খুঁজে পেতাম না। ভীষণ কষ্টের ছিল রাজনীতি জীবনের সূচনা। পুলিশের মার খেয়েছি, কিন্তু পিছপা হইনি। আন্তরিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচারণা চালিয়ে গেছি। ধীরে ধীরে সংগঠনকে সাজিয়েছি। গুছিয়ে নিয়েছি নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে। এক পর্যায়ে নোয়াখালী জেলার ১০৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০২টি ইউনিয়ন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন) উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল সে সময়। নোয়াখালী জেলার মেয়রের আসনে আমি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। সেটাও আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছি। ২০০৮ সালে আমার নির্বাচনি এলাকা ছিল ওবায়দুল কাদের সাহেবের এলাকা। তবুও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে আমাকে নোয়াখালী-৪ আসনে (সদর সুবর্ণচর) নির্বাচনি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রধানের নির্দেশ মোতাবেক আমি সেখান থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ভোটে অংশ নিয়ে আমি বিজয়ী হই। আপনার গড়ে তোলা নোয়াখালীর সেই সংগঠন থেকে আপনি এখন সাধারণ সম্পাদক নন কেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পরপর তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে আমাদের নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন হয়। সেখানে আমি আবার পুনর্নির্বাচিত হই। আমাদের বর্তমান সভাপতি, ওনাকে আমি নিজ চেষ্টায় সভাপতি করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যালের মাধ্যমে আমরা দুজন প্রার্থী হয়েছিলাম। দুঃখের বিষয় হলো- কমিটি দেওয়ার আগে আমাদের মির্জা কাদের, আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের ভাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার করেন। আমাকে নানাভাবে কটূক্তি করেন। বিভিন্ন ইঙ্গিত-ইশারায় উনি আমাকে নিম্ন পর্যায়ের কথাবার্তা বলেন। এসব ঘটনার পর নেত্রী আবার সম্মেলন ডাকেন। সেই সম্মেলনে আমি আর উপস্থিত ছিলাম না। সম্মেলনে আমি যোগ দিইনি। কারণ, আমার মনে ক্ষোভ ছিল, দুঃখ ছিল। এরপর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নতুন কমিটির কোনো কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। এ কমিটি এখনো পাস হয়নি। তারপর গত নির্বাচনে আমি জানতে পেরেছি আমাকে আমার আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন দেওয়া হবে না। সবাই মিলে সেই প্রচেষ্টাটিই করেছেন।

তবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালী জেলায় আমাকে যোগ্য মনে করেছেন, আমার অভাবটা বুঝতে পেরেছেন, আমাকে আবার নমিনেশন দিয়েছেন। আমি প্রায় ৮৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে বিজয়ী হই। তখনকার ভোটের কার্যক্রম আমাদের নোয়াখালীর নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের নোয়াখালী আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছিলেন। ভোটের মাঠে আমাকে হারানোর চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের ভালোবাসায় আমি জয়ী হই। এখন উপজেলা ভোট এসেছে। এ ভোটকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ভোটে আমাদের কোনো মার্কা থাকবে না। এখানে যে কেউ ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সে অনুযায়ী আমি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাপে আমার ছেলেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলি। দুই মাস আগে থেকে সেই প্রস্তুতি নিতে নিতে আজ এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগের প্রবীণ- নবীন সবাই সাবাব চৌধুরীর প্রাণের স্পন্দন হয়ে গেছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭