ইনসাইড ওয়েদার

দুর্যোগপূর্ণ ও বিপজ্জনক তাপমাত্রার দিকে দেশ!


প্রকাশ: 21/04/2024


Thumbnail

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০–এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে।

গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। গড়ে সারাদেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।

আজ রোববার (২১ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, আগামী ২৪ থেকে ২৫ এপ্রিল তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে ২৭, ২৮ তারিখে আবার বেড়ে যাবে তাপমাত্রা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে সারাদেশে থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর অতি উষ্ণ ও আর্দ্রতার বিপদ থাকতে পারে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত।

তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে শুধু তাপমাত্রার তীব্রতা দিয়ে মানুষের কষ্ট ও বিপদ বোঝা যাবে না। কোথাও তাপপ্রবাহ অর্থাৎ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে না গেলেও বিপজ্জনক আবহাওয়া তৈরি হতে পারে। কোথাও যদি তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৪০ শতাংশের বেশি হয় এবং বাতাসের প্রবাহ কম থাকে, তাহলে সেখানে অতি উষ্ণতার বিপদ তৈরি হতে পারে। এপ্রিল মাসজুড়ে বাংলাদেশে এই অতি উষ্ণতার বিপদই তৈরি হচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, গত ৬০ বছরে এপ্রিলের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। চলতি মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসে।

এবার বৃষ্টি ও বাতাস নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। আর গতকাল দেশের অন্তত ১২টি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে আর্দ্রতা বা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ; কিন্তু এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে তা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে ছিল। গতকাল ঢাকার বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশ করা ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহের একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনুযায়ী, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকছে।

গবেষণা বলছে, ওই উচ্চ গরমের সঙ্গে মানুষের শরীর খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নানা ধরনের রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। ওই উচ্চ তাপমাত্রা শহরে খাওয়ার পানি ও বিদ্যুতের সংকট তৈরি করছে। এছাড়া ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া এবং খরা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মানুষের মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং সামাজিক অশান্তি তৈরির ক্ষেত্রেও ওই অতি উষ্ণতা ভূমিকা রাখছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭