ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারতের তথ্য ব্যবস্থার ত্রুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/04/2018


Thumbnail

ভারতের দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদ নেই, তবে কিছু তেল আর অপ্রতুল পানিসম্পদ রয়েছে। ভারতের আসলে যা আছে তা হলও ১৩০ কোটি মানব সম্পদ, এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। আর তথ্যকে যখন ‘নতুন তেল’ বলা হচ্ছে তখন এই মানব সম্পদের কারণেই ভারত অত্যন্ত ধনী। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সম্পদ থেকে কারা লাভবান হচ্ছে? আর কেই বা এর ঝুঁকি নেবে?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারণে উৎসাহমূলক প্রচুর ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন তিনি। দেশের অবস্থার পরিবর্তনে এর ক্ষমতা ও কার্যকারিতার প্রশংসা বার বার করা হয়েছে।

ভারতে এখন বায়োমেট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করে স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষকদের এবং অফিসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি গণনা করা হয়।   নগদ অর্থায়ন প্রকল্পকে নিরুৎসাহী করে তিনি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর লেনদেনকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন।

মোদি সরকার এই বিষয়ে সব সময়ই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তারা প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য স্বতন্ত্র শনাক্তকারী নাম্বারের ব্যবস্থা করেছে। এটিই আধার কার্ড, যা বায়োমেট্রিকের সঙ্গে সংযুক্ত। ২০০৯ সালে কংগ্রেস সরকার নানা অপরাধ ও দুর্নীতি রোধে এই প্রকল্প নিয়েছিল।

ওই সময়ে গুজরাটে ভারতীয় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক। এবং যথারীতি কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। যাই হোক প্রধানমন্ত্রীর পদে বসার পর মোদই এই প্রোগ্রামকে বরণ করে নিলেন।  ভারতে এখন যে কোনো কাজেই জন্য স্বতন্ত্র শনাক্তকারী নাম্বারটি প্রয়োজন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, স্কুলে ভর্তি, মোবাইল ফোনের যোগাযোগে, ভ্রমণের রেকর্ড, হাসপাতালে ভর্তি এমনকি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও আধার কার্ড প্রয়োজন। যদিও মোদই সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই প্রোগ্রামটি বাধ্যতামূলক করা হবে না।

মোদির উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ তাঁর দক্ষতাকেও পেছনে ফেলেছে। তিনি কাজে কর্মে বুঝিয়ে দিয়েছেন তথ্যই ‘বাস্তব সম্পদ’। এটি যারা নিয়ন্ত্রণ তাঁর। এর মাধ্যমে কর্তৃত্ব অর্জন করা যায়। আর রাজনৈতিক কর্তৃত্বই মোদির লক্ষ্য। তিনি গত চার বছর ধরে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত ও দৃঢ় করেছেন। আর এভাবেই বিজেপি ২৯টি স্টেটের মধ্যে ২৭টি স্টেটেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। 

তবে ভারতের মত বড় দেশের জন্য বড় তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন বার বারই অপ্রত্যাশিত বাধায় পড়েছে। আধারের গ্রাহকদের শনাক্ত করতে ভারতের প্রযুক্তি বার বার ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের বিদ্যুৎ সংকট আর অপ্রতুল ইন্টারনেট সংযোগ ছিল এর প্রধান বাঁধা। এতে গরীবদের সেবার দেওয়ার জন্য যে আধার কার্ড করা হলো তা মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করতে শুরু করল। মানুষ তাঁদের নিত্য দিনে ব্যবহার্য ক্রয় ও সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।

এই অবস্থাকে আরও খারাপ করে দিয়ে আধার কার্ডের তথ্য ফাঁসও হলো। ভারতের ট্রিবিউনের সাংবাদিকেরা মাত্র ৫০০ রুপির বিনিময়ে আধার কার্ডের তথ্য কেনা যায় বলে কিনে দেখিয়ে দিলেন। ভারতের সরকারি তেল ও গ্যাস কোম্পানির একটি ওয়েব সাইট থেকে প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ যে কেউ পাঁচ কোটি গ্রাহকের তথ্য দেখতে পারতো। এই তথ্যের মধ্যে, ব্যাংক বিবরণী ও আধার নম্বরও ছিল। সেই সঙ্গে এক কোটি ৬০ লাখ আধার কার্ড ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ভুল করে ফাঁস হয়ে যায়। একই সঙ্গে ভারতের দক্ষিণের অন্ধ্র প্রদেশে দুই কোটি শ্রমিকদের তথ্যও ফাঁস হয়ে যায়।

আধার কার্ডের অংশগ্রহণকারীরা ফেসবুকের ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চেয়ে বেশি আপোষমূলক আচরণ করেছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে মোদির সরকার শুধু সব কিছু অস্বীকারই করেছে। আর সব কিছু যতটা সম্ভব গোপন ও অস্পষ্ট করেছে।


লেখক: শশী থারুর, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লোকসভা সদস্য

বাংলা ইনসাইডার/ডিজি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭