ইনসাইড পলিটিক্স

ঘোষণা দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো বিএনপির রাজপথের কর্মসূচি


প্রকাশ: 22/04/2024


Thumbnail

দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা তা আবার প্রত্যাহার করতে হলো ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে। এবার প্রকৃতিও যেন বিএনপি সঙ্গে বৈরি আচরণ করলো। আগামী শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের কারাবন্দী নেতা কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা করেছিল দলটি। আর এই সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে আবার রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছিল ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি। 

তবে বিএনপির এই সময়ে এ ধরনের কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে যেমন দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে তেমনি সাধারণ মানুষ এই ধরনের কর্মসূচিতে খানিকটা বিরক্ত। সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে এবং চটজলদি এ ধরনের দাবদাহ কমার সম্ভাবনা নেই। বরং আবহাওয়া অফিস যে বার্তা দিয়েছে তাতে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এরকম একটি অস্থির আবহাওয়ার মধ্যে বিএনপি আগামী শুক্রবার এই কর্মসূচি কেন দিল তা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাই বিস্মিত। যদিও চলমান তাপপ্রবাহের কারণে পূর্ব ঘোষিত আগামী ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত করেছে দলটি। সমাবেশের নতুন তারিখ নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন তারিখ নির্ধারিত হলে জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

তবে বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন যে, দলের ভিতর হতাশা, ব্যর্থতার গ্লানি এবং অস্থিরতা কাটানোর জন্যই বিএনপি রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে এক ধরনের অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, বিএনপি যে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে এই বর্জনের ফলে দলের ভিতর এক ধরনের অস্বস্তি এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দলের নেতারা মনে করছেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনসংযোগ বৃদ্ধি করা যায়, সংগঠনকে শক্তিশালী করা সম্ভব। আর এ কারণেই বিএনপির কেউ কেউ বলছে, যদি রাজপথে নিয়মিত কর্মসূচি দেওয়া যায় তাহলে কর্মীরা চাঙ্গা থাকবে। তাই বিএনপির সমাবেশ। 

দ্বিতীয়ত, বিএনপির মধ্য থেকে কয়েক জন নেতা মনে করছেন যে, সরকারকে একটু চাপে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। না হলে এই সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পাত্তাই দেবে না। আর সে কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে এখন এই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। 

তৃতীয়ত, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছে সেই হতাশা কাটানোর জন্য সাংগঠনিক কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলেই বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ মনে করছেন, যে কারণে তারা এধরণের কর্মসূচি প্রদান করেছেন। কিন্তু বিএনপির নেতৃবৃন্দ যারা দায়িত্বশীল এবং আন্দোলন সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা মনে করেন যে, এই মুহূর্তে এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ এখন দেশের জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত না, রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত না। 

তাছাড়া বিএনপির মধ্যে কথা ছিল যে, তারা কর্মসূচি দিবেন জনস্বার্থ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। যেমন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ইত্যাদি। সেটি না করে তারা বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে এই সময়ে হঠাৎ করে এ ধরনের কর্মসূচি কেন মানুষ গ্রহণ করবে? বেগম খালেদা জিয়ার কারাভোগ এখন একটি বাস্তবতা। এটির বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন করেছে কিন্তু কোন ফলাফল পায়নি। এখন নতুন করে এই ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসে দলটি কি অর্জন করতে চায় তা নিয়েও বিস্মিত। কারণ যে ইস্যুটি একটি পরিত্যাক্ত ইস্যু, যে ইস্যুটি আদালতের বিচারাধীন একটি ইস্যু এবং যেহেতু বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ইতোমধ্যে সরকার সহানুভূতি দেখিয়েছে, তাকে কারাগার থেকে ফিরোজায় থাকার অনুমতি দিয়েছে সেহেতু এখন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন অযৌক্তিকই শুধু নয়, হাস্যকরও বটে। আর বিএনপি তার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই এ ধরনের উদ্ভট কর্মসূচি দিচ্ছে বলে বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭