ইনসাইড পলিটিক্স

খোকনের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে পারল না বিএনপি?


প্রকাশ: 26/04/2024


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে। 

একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, স্কাইপে তারেক জিয়ার উপস্থিতিতেই মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং কায়সার কামাল একের অপরের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, আহমদ আজম খান উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মাহবুব উদ্দিন খোকন অংশগ্রহণ করেছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে। এই নির্বাচনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বিজয়ী হলেও অধিকাংশ পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থীরা পরাজিত হন। এরপর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, মাহবুব উদ্দিন খোকন যেন সুপ্রিম কোর্টের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ না করেন। কিন্তু ফোরামের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেই মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর এই দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দেয় এবং দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে এমন গুঞ্জন উঠেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যত বড় নেতাই হোক না কেন, তিনি যদি দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের একটা রীতি চালু হয়েছে। আর এ রকম কারণে বিএনপির বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতা শেষ পর্যন্ত দলে থাকতে পারেননি। তৈমুর আলম খন্দকার তার একটি বড় উদাহরণ। এ রকম বহু উদাহরণ বিএনপিতে এখন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই বিবেচনা থেকে অনেকে মনে করেছিলেন যে, মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধেও হয়তো বিএনপি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আদর আপ্যায়ন করেই দলের মধ্যে রাখা হল এবং মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও গণমাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়নি। 

প্রশ্ন উঠেছে কেন খোকনের ব্যাপারে বিএনপির নেতারা নমনীয় হলেন? এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি এখানে ভূমিকা রেখেছেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার তিনি আইনজীবীও বটে। এই বৈঠক শেষ করেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিষয়টি অবহিত করেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বিএনপিতে রাখার পিছনে বা খোকনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান বিএনপির না নিতে পারার প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ। দ্বিতীয়ত, কেউ কেউ মনে করছেন যে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে মাহবুব উদ্দিন খোকন একটি বড় ফ্যাক্টর। সুপ্রিম কোর্টে তিনি একজন জনপ্রিয় আইনজীবী। তার নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি বিরাট অংশ রয়েছেন। এই মুহুর্তে যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট বিএনপির হাত ছাড়া হয়ে যাবে। কারণ কায়সার কামালের আইনজীবীদের মধ্যে সে রকম কোন অবস্থান নেই। সবকিছু মিলিয়ে খোকনকে বহিষ্কার করা হলে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি বড় ধরনের একটি ধাক্কায় পড়বে বলে বিএনপির নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তৃতীয়ত, মাহবুব উদ্দিন খোকনের যে যুক্তি ছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকলে দলের জন্য অনেক কাজ করা যাবে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ অন্যান্য ইস্যুতে কথা বলার সুযোগ থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টে বিএনপির একটা অবস্থান থাকবে। এ সমস্ত বক্তব্য গুলোই শেষ পর্যন্ত বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আর এ কারণেই খোকনের ব্যাপারে বিএনপি শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭