ইনসাইড বাংলাদেশ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কী তালগোল পাকাচ্ছেন?


প্রকাশ: 30/04/2024


Thumbnail

করোনাকালে প্রায় দুই বছর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার ক্ষতি নিয়ে সে সময় অনেকে কথা বলেছেন, অনেকেই আহাজারি করছেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তারা বলেছেন, জীবন সবচেয়ে মূল্যবান। জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। তাই তারা অনলাইন এ ক্লাস চালু রাখেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরও বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে গড়িমসি করা হয়েছিল। এবং নজিরবিহীন ধীর নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। এটি নিয়ে তৎকালীন সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমালোচিত হয়েছিল।

এবার আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মরিয়া দেখা যাচ্ছে। এখন আগের শিক্ষামন্ত্রী নেই। ডা. দীপু মনি এখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু মহিবুল হাসান চৌধুরী, যিনি ডা. দীপু মনির সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি এখন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছেন।

কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে? কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কেন পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে হবে এনিয়ে বিশিষ্টজনদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিস্থিতি যখন একের পর এক হিট অ্যালার্ট দিচ্ছে, তাপমাত্রার পারদ যখন দিনদিন চড়ছে। তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একগুঁয়েমি করছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

সকলেই দাবি করেন যে এখন বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। সেখানে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সহজে যেতে পারে। এবং করোনার সময় শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া এবার যে গরম পড়েছে, যে কয়দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছিল তাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক স্বাস্থ্যহানির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে বহু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি রুটিনের দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমনটি শিক্ষা শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন। সেই রুটিনে অনেকগুলো বন্ধ থাকে। বিভিন্ন কারণে বন্ধ রাখতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেমন গ্রীষ্মের ছুটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে, যেটি জুনে হওয়ার কথা। এছাড়াও ঈদুল আজহা উপলক্ষেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে গ্রীষ্মের ছুটি এবং অন্যান্য ছুটিগুলো কমিয়ে এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাই যৌক্তিক। কারণ শিক্ষার্থীরা যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কোন দুর্ঘটনার মধ্যে পতিত হয়, তাহলে এটির দায় দায়িত্ব শুধু একা শিক্ষামন্ত্রীর ওপর বর্তাবে না, পুরো সরকারের ওপর বর্তাবে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা মনে করেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জোর করে এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে নেয়ার ফলে একটি অবিশ্বাসের সম্পর্ক হচ্ছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে একটি সুসম্পর্কের মেলবন্ধনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান চর্চার জন্য জরুরী। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কর্তৃপক্ষ জোর করে খোলা রাখে, তাহলে স্বাভাবিক পরিবেশটি নষ্ট হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করে যে, অস্থিরতা না করে, একগুঁয়িমে না করে শিক্ষামন্ত্রী একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করেবেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যাপারে তার অবস্থান পুর্নবিবেচনা করবেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭