ইনসাইড পলিটিক্স

মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না


প্রকাশ: 01/05/2024


Thumbnail

প্রথম দফায় প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। গতকাল ছিল দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। দ্বিতীয় দফায় ১৫৯ টি উপজেলায় ২১ মে নির্বাচন হওয়ার কথা। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেছে, যে ১৪ জন এমপি এবং মন্ত্রীর নিকট আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তারা দলের নির্দেশ মানেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে ১৪ জন এমপি এবং মন্ত্রীর নিকট আত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। 

দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দুইজন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতায় থাকলেন। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী থাকার বিষয়ে অটল রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন। তিনি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই। 

রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সেখানকার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হাকিম। তিনি রেলমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি মোঃ জিল্লুর হাকিমের চাচাত ভাই। 

গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ছেলে জামিল আহসান দূর্জয় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। 

এ তিনজন মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন। 

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ এবং ছোট ভাই ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুজ্জামান আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভাই গোলাম সরোয়ার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায়। এভাবে দ্বিতীয় দফাতেও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ভীতিহীনভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কঠোর হুশিয়ারিকে তারা পাত্তাই দিচ্ছে না। 

প্রথম দফায় অনেকে বলেছেন যে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং সেই সময় তিনি বলেছিলেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হওয়ার জন্যই তিনি তার ছেলেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিতে পারেননি। কিন্তু ২১ মে যে উপজেলাগুলোতে নির্বাচন হবে এবং গতকাল যার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল সে উপজেলাগুলোতেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন।
 
প্রশ্ন হলো যে, দলের মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের নির্দেশনা মানছেন না। এর পেছনে কি কারণ রয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একাধিক কারণের কথা উল্লেখ করছেন। 

১. দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব: যারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে। তারা দলের চেয়েও নিজের স্বার্থকে বেশী দেখছেন। দলে কি হলো না হলো তার চেয়ে তাঁর নিজের অবস্থান কতটা সংহত হলো সেটা তিনি বিবেচনা করছেন। এজন্য দলের নির্দেশনা তারা মানছেন না।  

২. এলাকায় অস্তিত্ব রক্ষা: এসমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। নিকট আত্মীয়দের এলাকার চেয়ারম্যান বানিয়ে তাদের অবস্থঅন শক্ত করতে চাই। এলাকায় তাদের অবস্থান সংহত করার জন্যই আসলে তারা দলের সিদ্ধান্ত তারা মানছেন না। 

৩. অতীত অভিজ্ঞতা: অতীতে দেখা গেছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে দলের প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তারা এবারও মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছু ম্যানেজ করে নিবেন। আর এই কারণেই দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এই মন্ত্রী-এমপিরা।         



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭