ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী


প্রকাশ: 04/05/2024


Thumbnail

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত প্রায় সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বিক্ষোভ দমনে এক সপ্তাহে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দুই হাজারেও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। এখনও চলছে ধরপাকড়। এরমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থিদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলপন্থিরা। 

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এত অভিযান, ধরপাকড় ও দমন-নিপীড়নেও দমছে না ইসরায়েলবিরোধী এ বিক্ষোভ। বরং, নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় বিক্ষোভের এ ঢেউ আছড়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও। ইতোমধ্যে বিক্ষোভের এ ঢেউ প্রবল আকার ধারণ করতে শুরু করেছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, লেবানন ও জর্ডানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাদের প্রতিবাদে শামিল হতে উৎসাহিত করছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। দেশে দেশে এমন বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলোর তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা প্রকাশিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার থেকে কানাডার টরন্টো ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ভাঙতে হবে এবং দেশটিতে যাবতীয় বিনিয়োগ ও সহায়তা বন্ধ করতে হবে।

কানাডার বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দিয়ে ইসরায়েলে কোনো বিনিয়োগ চলবে না। ইসরায়েলি বর্ণবাদ, দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনের অবৈধ বসতি স্থাপন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক শেষ না করা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলতে থাকবে।

এদিকে মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমনে পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কানাডার আইন প্রয়োগকারীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়, তারা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতির অবনতি না হওয়া পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে সাড়া দেবেন না।

দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার জায়গা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা; তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কেবল নিরাপদবোধ করলেই এটি কাজ করে। এই মুহূর্তে নিরাপদ বোধ করছে না ইহুদি শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে ইসরায়েলের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াতেও। দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

শুক্রবার (৩ মে) দেশটির সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এসময় যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানান তারা। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলো থেকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তোলেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেলবোর্ন, ক্যানবেরাসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই ধরনের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোর মতো অস্ট্রেলিয়াতে এখন পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়নি পুলিশ।

অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন শুরু হলেও অনেকটা শান্ত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের পর এখন আরও সোচ্চার হয়ে উঠতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। বিশেষ করে দেশটির বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুততার সঙ্গে ভারী হচ্ছে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন। বিক্ষোভকালে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগানও বের হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে। এরপরও এখন পর্যন্ত মারমুখী অবস্থানে যায়নি পুলিশ; ঘটেনি কোনো সহিংস ঘটনা।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মার্ক স্কটও বলেছেন, ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দেওয়া হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সহিংসতা দেখা যায়নি। তিনি জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকবে, কোন গোলযোগ হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেবে না।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইসরাইলবিরোধী এ বিক্ষোভে সমর্থন জানাতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার সাধারন নাগরিকরাও। অনেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন ক্যম্পাসে। তাদেরই একজন ৩৯ বছরের ম্যাট। তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিশুকে নিয়ে এসেছি। ফিলিস্তিনি শিশুদেরও ওর মতো জীবন চাই। আমি এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি এটা দেখাতে যে- গাজায় ইসরায়েলের হামলার ফলে শুধু শিক্ষার্থীরাই ক্ষুব্ধ, তা নয়। একবার আপনি অনুধাবন করুন, কি হচ্ছে এবং আপনার করণীয় কী! তখনই দেখবেন আপনি এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন, সচেতনতা বাড়াচ্ছেন এবং সংহতি প্রকাশ করছেন।’

বিক্ষোভকারীদের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মতো এতটা সহনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে না ফ্রান্স সরকার। ইসরায়েলবিরোধী মতাদর্শ দমনে দেশটি অবলম্বন করেছে মার্কিন পন্থা। শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় কদিন আগেই লিওঁতে অবস্থিত স্বনামধন্য ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ (সায়েন্সেস পো) এর জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ ঘোষণা করেছে সেখানকার সরকার। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের দমনে দাঙ্গা পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল বলেছেন, উত্তর আমেরিকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার দেশের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা যে মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না তার সরকার।

প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে সীমিত আকারে প্রতিবাদ জানানো হলেও সম্প্রতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করার পর গত কয়েকদিনে ওই বিক্ষোভের হাওয়া এসে লাগতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। ইতোমধ্যে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, শেফিল্ড, ব্রিস্টল ও নিউক্যাসলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দানা বেঁধেছে ইসরায়েলবিরোধী এ বিক্ষোভ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭