ইনসাইড বাংলাদেশ

চাকরির বয়সসীমা কী ৩৫ হচ্ছে


প্রকাশ: 06/05/2024


Thumbnail

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে দেওয়া এক ডিও লেটারে উল্লেখ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে ৩৩ নং পৃষ্ঠায় শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। আর এ রকম একটি ডিও লেটারে শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন দেশে চাকরির বয়সসীমা উল্লেখ করেছেন। 

তিনি বলেছেন, বিশ্বের ১৬২ দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। আবার অনেক দেশে চাকরিতে বয়স প্রবেশ উন্মুক্ত। নেই বয়সসীমার বালাই। দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪৫ বছর উল্লেখ করে মহিবুল হাসান চৌধুরী মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে ৩৫ বছরের চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে বলে তার ডিও লেটারে উল্লেখ করেছেন। এমনকী চীনের চাকরিতে বয়সসীমা ৪০ বছর। সেক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩৭ বছর এবং পুলিশের এসআই ও সার্জন নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই ডিও লেটার ইতোমধ্যে পেয়েছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন যে, এই নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। 

এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি চাকরি বয়সসীমার বৃদ্ধির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়টা যুবলীগের এই আবেদন গ্রাহ্য করা হয়নি। চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছিল এবং সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরির বয়সও বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে এখন সেশনজট নেই। শিক্ষার্থীরা ২৫ বছর বয়সেই তার শিক্ষা জীবন শেষ করেন। এ কারণে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবকে প্রধানমন্ত্রী তখন নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে ডিও দিয়েছেন তখন এটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। 

মহিবুল হাসান একজন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সরকারের স্পর্শকাতর নীতি নির্ধারণী বিষয় তিনি ডিও দিলেন কেন-এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছে। মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। তিনি যদি চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে তার মনোভাব ব্যক্ত করতে চাইছেন, সেটাতে ডিও দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিনা সেটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। 

অনেকে বলছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেখা করে সরাসরি তিনি বিষয়টা উত্থাপন করতে পারতেন। সেটি না করে একটি ডিও দিলেন। এটি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ড কিনা তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী এই কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে অনেকে মনে করে।

কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার হয়ত বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের যা বলেছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোন মনোভাব গ্রহণ করা হয়নি বা প্রধানমন্ত্রীর আগের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়েছে এমন কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। তাহলে মহিবুল হাসান চৌধুরী একজন দায়িত্ববান এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়ে কীভাবে এই ডিও লেটারটি দিলেন। এটি কী সরকারের সমন্বয়হীনতার একটি প্রতিফলন নাকি সরকার সত্যি সত্যি চাকরির বয়সসীমার ব্যাপারে দেখতে চায়।

বর্তমানে চাকরিতে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। যদিও বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন। আবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাকরির বয়স ৬৭ বছর। এই বাস্তবতা বিচার করে অনেকে মনে করেন যে, চাকরির অবসর বয়সের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য আনা দরকার। সেই বিষয়টিকে বিবেচনা করে চাকরির অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়টিও একটি আলোচিত এবং কাঙ্খিত বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে সরকার চাকরির বয়সসীমা বাড়াবে কিনা সেটি নিয়ে এখন একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। 

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত সরকার এই বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭