ইনসাইড পলিটিক্স

মন্ত্রী-এমপিদের সাথে তৃণমূলের শেষ লড়াই?


প্রকাশ: 07/05/2024


Thumbnail

আগামীকাল দেশের ১৪০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে তারা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হয় সে জন্য যথা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সে কারণেই আওয়ামী লীগ এই কৌশল গ্রহণ করেছে। এই কৌশলের কারণে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় একাধিক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচন অধিকাংশ স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

জাতীয় নির্বাচনের মতোই বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা উপজেলা নির্বাচনে যেন ভোটাররা ভোট দিতে না যায় সে জন্য প্রচারণা করছে। তবে তাদের প্রচারণা খুব একটা সাড়া ফেলেনি। কারণ ১৪০ টি উপজেলার মধ্যে ৭৩ টিতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে। বিএনপি ঘোষণা করেছিল যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং এই কারণে দলের ৭৩ জন স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলের বহিষ্কারাদেশকে তোয়াক্কা না করে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন এই সমস্ত বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তবে নির্বাচনের মাঠে থাকলেও তারা তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। কারণ একদিকে যেমন কর্মী সমর্থকরা বহিষ্কারাদেশের ভয়ে প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না, অন্যদিকে দলীয় সমর্থন না পাওয়ার কারণে বিএনপির প্রার্থীদের অবস্থা খুব একটা সুবিধাজনক নয়। আর সেই কারণেই এবার উপজেলা নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। 

তবে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের চেয়েও মন্ত্রী-এমপিদের মাইম্যানদের সাথে তৃনমূলের লড়াই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৪০ টি উপজেলার মধ্যে ৩১ টি উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তবে সবগুলো উপজেলাতেই মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব পছন্দের প্রার্থী বা মাইম্যান রয়েছে। যে সমস্ত প্রার্থীদেরকে মন্ত্রী এমপিরাই নির্বাচনে দাঁড় করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্ররোচনা দিয়েছেন এবং তারা স্থানীয় পর্যায়ে মন্ত্রী-এমপির লোক হিসেবে পরিচিত। আর এই কারণেই এই সমস্ত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। মন্ত্রী-এমপিদের কর্মীবাহিনী এবং সমর্থকরা ওই সব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তারা সবসময় সচেষ্ট থাকছেন যেন মন্ত্রী-মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন। আর এ কারণেই মন্ত্রীদের একাধিপত্য, তাদের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূল অধিকাংশ স্থানে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। কর্মী সমর্থকদের একটি বিপুল অংশ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে এবং তাদের পক্ষে একট্টা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন, উপজেলা নির্বাচন আসলে মন্ত্রী-এমপিদের মাইম্যানদের সাথে তৃণমূলের লড়াই এবং এই লড়াইয়ে যদি তৃণমূল হেরে যায় তাহলে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে হতাশা আসবে। যারা ত্যাগী পরীক্ষিত তারা অসহায় বোধ করবে এবং আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী যে দিকটি অর্থাৎ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতশ এবং আশাহত হবেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগে স্বজন প্রীতি বন্ধ করার জন্য আহবান জানানো হয়েছিল। যারা মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজন তারা যেন নির্বাচন অংশগ্রহণ না করে সে জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বার্তা কর্ণপাত করেননি অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিরা। এখন দেখার বিষয় মন্ত্রী-এমপিদের সাথে তৃণমূল যে যুদ্ধ করছে সেই যুদ্ধে কতটুকু সফল হয়। কার কাও মতে এটাই তৃণমূলের শেষ যুদ্ধ। যদি এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের প্রার্থী  জয়ী তাহলে তৃণমূলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। প্রতিটি এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আর যদি মন্ত্রী-এমপিরা পরাজিত হয় তাহলে তৃণমূল শক্তিশালী হবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭