ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবরে গাফ্ফার ভাই সাংঘাতিক ভাবে ভেঙে পড়েন


প্রকাশ: 20/05/2024


Thumbnail

১৯ মে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যু দিবস। ২০২২ সালের আজকের দিনে তিনি আমাদেরর ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাঙালী এমন একজন সন্তান হারিয়েছে যার স্থান কোনদিন পূরণ হবে না। তাঁর সাথে আমার অনেক সময় আমার আলাপ হয়েছে। তার সবকিছু লেখা উচিত না, সম্ভবও না।

এক এগারোর সময় আমার ছেলে ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছিল। সেখান থেকে সে আমার এবং আমার স্ত্রীর নামে একটা দাওয়াত আয়োজন করে। কারণ এক এগারোর সময় আমার বিদেশের ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ না থাকলেও আমার একটা দায় ছিল যা হয়তো যেতে দেবে না। যখন আমি যাওয়ার প্রস্তুতি নিই তখন আমাকে একজন বুদ্ধি দিল যে আমার মেডিকেল ডকুমেন্টসগুলো যাতে আমি যেকোন মাধ্যমে পাঠিয়ে দেই। কারণ সাথে নিলে হয়তো আমাকে চেকআপ করতে হতে পারে। আমি সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সুলতান সজিব ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। এরপর লন্ডনে যাওয়ার একদিন একটা রেস্টুরেন্টে গফ্ফার ভাই, সুলতান ভাই, আমি এবং মোকাম্মেল সাহেব একসাথে বসি। তখন আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে গাফ্ফার ভাই বললেন, বঙ্গবন্ধুর ছায়াতে যে কোন মানুষকেই খুব বড় মনে হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা শূন্য। তিনি আরও বিস্তারিত বললেন, যে যত বড় নেতাই হোন না কেন, যত বুদ্ধিমানই হোক না কেন তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর ছায়াতে থাকলে হয়, না হলে হয় না। অর্থাৎ এগুলো আসলে বঙ্গবন্ধুরই বুদ্ধি থেকে অংশ পায়। যেমন বর্তমানে আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে মেশার পর অনেক কিছু জানি এবং আমাদের অনেকে সালামও করে। এই সালামটা আসলে তারা আমাদের না বঙ্গবন্ধুর কন্যাকেই দেই। শেখ হাসিনার সালামটা পাই আমরা। যদি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একটু মুখ কালো করে আমাদের সাথে কথা বলে তাহলে পরেরদিন সালামের সংখ্যা কমে যাবে। এ হচ্ছে বাস্তবিকতা। এটা গফ্ফার ভাইয়ের সাথে আমার একটা শিক্ষা। 

আরেকটা বিষয় আমি বলি, বঙ্গবন্ধুর সময় তিনি (আব্দুল গাফফার চৌধুরী) বঙ্গবন্ধুর অভ্যুদয় নামে একটা বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করতো আমিনুল হক বাদশা এবং মোজাম্মেল আলীসহ আরও কয়েকজন মিলে। সেই পত্রিকাটি বঙ্গবন্ধু একসময় আমাকে লোকের মাধ্যমে জানায় যে, লন্ডনে একটি বাড়ি কিনলে সে বাড়ির কিছু অংশ ভাড়া দিয়ে আমার চলে যাবে। কিন্তু তা আমার নামে কিনতে হবে যাতে সে সম্পত্তি চিরকাল আমাদের থাকে। আমাকে তখন এফআরসিএস করার জন্য বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পাঠিয়েছেন সেজন্য আমি তখন ব্যস্ত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সাথে সেসময় আমার যোগাযোগ তো দূরের কথা, যারা এইসব খবর দিতে পারে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শুধুমাত্র সুলতান শহীদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। এবং আমি এ ব্যাপারে রাজি হলাম না। সুতরাং বাড়ি কেনা হয়নি। ঐ পত্রিকা থাকতে তখন  বঙ্গবন্ধুকে সমালোচনা করে তিনি একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন সম্ভবত ১৯৭৫ সালের জুন মাসের দিকে। তখন এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে এ বিষয়টি জানানো হলে, তিনি বললেন, ‘বাচ্চাটিকে পাঠিয়ে দে’। ঐ পত্রিকাকে বললো, ‘তোদের কাছে যে টাকা পয়সা আছে তাই দিয়ে ওকে একটা বিলেত থেকে পাঠিয়ে দে দেশে। তো উনি আসলো। কি আলাপ হলো সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। কিন্তু যাওয়ার কিছুদিন পর আরও একটি আর্টিকেল লিখলেন। তার মূল সুর হচ্ছে এই যে, বঙ্গবন্ধুকে বিপ্লবীরা ধ্বংস করার চেষ্টা করছে কিন্তু আমরা সকলে সেটা বুঝেও কিছু করতে পারছি না। মোটামুটি একটা একই রকম লেখা ১৯৭২ সালে শেখ ফজলুল হক মণি। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমাদেরকে ধ্বংস করা হচ্ছে।’ তবে তিনি খুব সন্তুষ্ট হননি। এটা ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শোনার সাথে সাথে গাফ্ফার ভাই সাংঘাতিক আকারে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। গাফ্ফার ভাইয়ের আঘাতটা আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের সকলের চেয়ে বেশি। যা তার পরবর্তী লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে। 

এক এগারোর সময় যখন তার সাথে আমার আলাপ হয় তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে অনেক কথায় বললেন। যে বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে অনেকে মানুষ হয়েছেন। কিন্তু তিনি একটি কথা কখনো বলেনি যে, বঙ্গবন্ধু লোক চিনতে ভুল করেছেন বা এমন কিছু। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ষড়যন্ত্রদের যদি চেনা যায় তাহলে তো তারা ষড়যন্ত্র করত পারবে না। এবং ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রে মনে হতো যে, আওয়ামী লীগের ভেতরে অনেক ষড়যন্ত্রকারী অবস্থান নিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে তারা বড় ভূমিকা পালন করবে। বিদেশী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিলো, জিয়াউর রহমান সাহেবের ষড়যন্ত্র ছিলো। ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনো সেইভাবে পর্যালোচনা করছে বলে মনে হয় না। 

আজ গাফ্ফার ভাই চলে গেছেন। অনেক কারণে চিরকাল তিনি মানুষের হৃদয়ে থাকবেন। তাঁর ভিতরে সবচেয়ে বড় যে কারণটি তা হলো, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো এ গানটির জন্য। কিন্তু এর সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কঠিন সময়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্লেষণ দিয়ে আওয়ামী লীগকে সবসময় কিভাবে ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে সতর্ক করতেন। সুতরাং আমার মনে হয় আজকে গফ্ফার ভাইয়ের কথা মনে করতে গিয়ে একথা বলতেই হবে যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কাছের প্রতিটি লোকও কিন্তু তার প্রমাণিত লোক এবং চিরকাল তাঁর সাথে থাকবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তা বিশ্বাস করি না। বরং অনেক লোক যারা এর চেয়ে বিশ্বস্ত ছিল তারা আস্তে আস্তে নিভৃতে চলে যাচ্ছে। এবং অনেকে পৃথিবী ছেড়েই চলে যাচ্ছে। সুতরাং আমার মনে হয় এ বিষয়টি নিয়ে আমি বলবো, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনারও চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। আজকে গাফ্ফার ভাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে যেকোন সময় তিনি যেভাবে স্পষ্ট বলতেন সেই কারণের জন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭