ইনসাইড পলিটিক্স

অভিযোগের ডালি সাজিয়ে কাল গণভবনে যাচ্ছে ১৪ দল


প্রকাশ: 22/05/2024


Thumbnail

দীর্ঘদিন পর ১৪ দলের সঙ্গে আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বসছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় গড়া ১৪ দলের অবস্থা এখন বেশ নড়বড়ে। ১৪ আছে কি না এই নিয়েই যখন ১৪ দলের নেতারা হতাশা এবং সংশয় প্রকাশ করছিলেন, ঠিক সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের বৈঠক আহ্বান করেছেন। নানা কারণে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

গত নির্বাচনের সময় থেকেই ১৪ দল আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১৪ দলকে ন্যূনতম আসন দেওয়া, ১৪ দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া, নারী সংসদ সদস্য পদে ১৪ দলের কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া, মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিকদের কাউকে স্থান না দেওয়ার প্রেক্ষিতে ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট একটি দূরত্ব তৈরি হয়। আর ১৪ দলের অনেক নেতারাই প্রকাশ্যে এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। ১৪ দল আছে কি নেই এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। সব কিছু ছাপিয়ে এখন ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

আগামীকালের এই বৈঠক নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন যে, কৌশলগত কারণেই ১৪ দল আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৪ দলের সঙ্গে যে সমস্ত শরিক দলগুলো আছে, সেই শরিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক থাকাও জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করা এবং রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান রাখার জন্য ১৪ দল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নানা কারণে আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে নির্বাচনের সময় থেকে উপেক্ষা করেছে। আর এই কারণেই এখন ১৪ দলের মধ্যে মান অভিমান জমে আছে। 

আগামীকালের বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা অভিযোগের ডালি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যাবেন বলে ১৪ দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে। আগামীকালের বৈঠকে যে বিষয়গুলো নিয়ে ১৪ দলের নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে তুলে ধরবেন তার মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের হেভিওয়েট নেতা হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হয়েছেন এবং এই সমস্ত জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গটি ১৪ দলের নেতারা উত্থাপন করবেন। 

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্য এর কোন বিকল্প ছিল না। ১৪ দলের নেতারা জনগণের ভোট পাননি। এখানে জোটগতভাবে কারও কিছু করার নেই। কাউকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনার পরিণাম কখনও শুভ হত না। কাজেই এই প্রসঙ্গটি কালকের বৈঠকে এলে ১৪ দলের শরিকদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। 
দ্বিতীয়ত, নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নে ১৪ দল উপেক্ষিত হওয়ার প্রসঙ্গটি ১৪ দলের নেতারা আনবেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, শিরীন আখতারকে গত নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি এবং সেই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, শিরীন আখতারকে পরবর্তীতে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গ নিয়ে এই নিয়ে ১৪ দলের জাসদের মধ্যে একধরনের হতাশা রয়েছে। 

তৃতীয়ত, মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়েও কথা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে ১৪ দল আদর্শিক দল। এখানে দেনা পাওনার হিসেব করা ঠিক হবে না। বরং আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি, বিরোধী দলের নতুন করে আন্দোলনের চেষ্টা ইত্যাদি প্রসঙ্গ আলোচনা করবেন। ১৪ দলকে সক্রিয় এবং সচল করার কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। মান অভিমান ভুলে গিয়ে বিভেদ হতাশা কাটিয়ে ১৪ দল যেন আবার সক্রিয় হয়ে উঠে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আশা জাগানিয়া এবং নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রাখবেন বলেই আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আগামীকাল সন্ধ্যায়  ১৪ দলের এই বৈঠকের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনৈতিক দলগুলো আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭