ইনসাইড গ্রাউন্ড

টি-২০ বিশ্বকাপ: পরিপূর্ণ ক্রিকেটারে ভরপুর অজি স্কোয়াড


প্রকাশ: 23/05/2024


Thumbnail

আর কিছুদিন পর আগামী ২ জুন থেকে শুরু হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। বিশ্ব ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে ব্যাটে বলে যার আধিপত্য, মাঠের লড়াইটাও তারই পক্ষে- এটাই সত্য। আর এজন্যই অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি দলই নিজেদের সেরা সৈন্যদের নিয়েই সাজিয়েছে স্কোয়াড।

এই টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রায় প্রতিটি দলই তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া। তবে তারাও শীঘ্রই তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে ইতোমধ্যেই তা জানিয়েছে।

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দলই বৈশ্বিক এই আসরে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাড়ি জমানোর। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানও করছে স্বাগতিকদের সাথে প্রস্তুতিমূলক সিরিজের জন্য।

এবারের বিশ্বকাপ অন্যান্যবারের তুলনায় ভিন্ন। কারণ এবারের বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে ভিন্নভাবে। ১০ দলের জায়গায় ২০ দল নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে বৈশ্বিক এই মহাযজ্ঞ। আর তাই বদলেছে সমীকরণও। 

বিশ্ব ক্রিকেটের এই সংস্করণের সেরা আট দল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল আগেই। এর সঙ্গে অটোমেটিক চয়েজে বিশ্বকাপের টিকিট পায় সেরা র‌্যাংকিংয়ে অবস্থান করা দুদল এবং আয়োজকরা। বাকি ৮ দলকে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে আঞ্চলিক পর্যায়ে লড়াই করতে হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আফ্রিকা, ইউরোপা, এশিয়া থেকে দুটি করে দল সুযোগ পেয়েছে। সেইসঙ্গে আমেরিকা এবং ইস্ট-এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে একটি করে দল বিশ্বকাপে খেলবে।

নতুন আদলের এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ভাগ করা হবে চার গ্রুপে। যার মধ্যে প্রতিটি গ্রুপে থাকবে ৫টি করে দল। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রতি গ্রুপের প্রতিটি দল একে অপরের মোকাবিলা করবে। সেখান থেকে প্রতি গ্রুপের সেরা দুটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে সুপার এইট। সেখান থেকে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালসহ টুর্নামেন্টে মাঠে গড়াবে মোট ৫৫টি ম্যাচ।

এবারে বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে দলের সংখ্যা বেশি হলেও পারফরম্যান্স বিবেচনায় হাতেগোনা কিছু সংখ্যক দলকেই সেমিফাইনাল এবং শিরোপার দৌঁড়ে দেখছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। যার মধ্যে বিশেষ নজরে রয়েছে সম্প্রতি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা এবং ২০২১ এর টি-২০ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ইতোমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের আসন্ন এই আসরের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা করেছে অজিরা। যেখানে রয়েছেন তরুণ থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ, হার্ড হিটার থেকে অলরাউন্ডার সব ধরনের তারকা খেলোয়াড়রা।

টি-২০ বিশ্বকাপের ৭ম আসরে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেবার বেশ ভালোভাবেই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিল তারা। তবে বৈশ্বিক এই মেগা ইভেন্টের ৮ম আসরে মাঝপথে খেয় হারিয়েছিল তারা।

তবুও ওয়ানডেতে ছয়বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২০২১-এর চ্যাম্পিয়নরা যেন ক্রিকেটের প্রতিটি বড় আসরেরই ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। 

ঘরোয়া লিগ আইপিএল-বিগ ব্যাশের অভিজ্ঞতা, সঙ্গে তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞদের সুবিধা- সবমিলিয়ে দলটির একাদশে যে মানের ক্রিকেটার আছেন তাতে এবারও অস্ট্রেলিয়া কাপ নেয়ার দৌঁড়ে ফেভারিট হিসেবেই থাকছে। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জেতার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে-

১. পরিপূর্ণ ক্রিকেটার

অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমত্তার জায়গার একটি মূল বিষয় হচ্ছে এই দলটি দীর্ঘদিন একসাথে ক্রিকেট খেলছে এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে খুব বেশি পার্থক্য নেই। একেবারে নিকট অতীতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আর সেই বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাই এবার কাজে আসতে পারে অজিদের এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

শুধু তাই নয়, এবার অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে রয়েছে পরিপূর্ণ ক্রিকেটাররা। যাদেরকে ক্রিকেটের ভাষায় কমপ্লিট প্যাকেজ বলা চলে। কারণ তারা তাদের ক্রিকেটীয় ধরনে একদিকে যেমন সামর্থ্যবান, অন্যদিকে তেমনই পারফরম্যান্সেও তুখোড়। যেমন- ট্র্যাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার, মার্কাস স্টয়নিস, মিশেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। একদিকে তারা যেমন নিজেদের ব্যাটিংয়ে সামর্থ্যবান, অন্যদিকে ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও তুখোড়। যদিও অজিদের স্কোয়াডের প্রায় শতভাগ ক্রিকেটারই ফিল্ডিংয়ে অন্যান্য যেকোনো দলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি একটিভ। 

২. হার্ড হিটিং ব্যাটিং ইউনিট

অস্ট্রেলিয়া বরাবরই মারকুটে ব্যাটিংয়ের দিক থেকে সেরাদের কাতারে থাকে। যা অজিদের ক্রিকেট দুনিয়ায় সাফল্যের অন্যতম কারণও বটে। আর শুধু যে অভিজ্ঞরা এই মারকুটে ব্যাটিংয়ের দায়িত্বভার সামলান অজি শিবিরের এমনটি নয়, তরুণরাও যেন নব উদ্যমে জ্বলে ওঠেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। 

অস্ট্রেলিয়ার হার্ড হিটিং ইউনিটের মধ্যে যারা আসন্ন বিশ্বকাপে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ট্রাভিস হেড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস।

সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেটের ঘরোয়া লিগ আইপিএলে হায়দ্রাবাদের হয়ে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন ট্রাভিস হেড। একাধিক ম্যাচে করেছেন সেঞ্চুরি। ব্যাট চালিয়েছেন ২০০+ স্ট্রাইক রেটে। শুধু ট্রাভিস হেড নয়, গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আইপিএল সবখানেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এর জয়জয়কার চলছেই। ব্যাট হাতে যেমন ঝড় তুলছেন সেই সাথে বল হাতেও নিচ্ছেন উইকেট। এছাড়া মার্কাস স্টয়নিস তো রয়েছেই। আইপিএলে তিনিও রীতিমত ঝড় তুলেছেন একাধিক ম্যাচে। আর এদের পাশাপাশি ডেভিড ওয়ার্নার, মিশেল মার্শ, ম্যাথ্যু ওয়েডদের মত খেলোয়াড়রা তো রয়েছেই। 

৩. বিশ্বসেরা বোলিং ইউনিট

টি-টোয়েন্টি সাধারণত চার-ছক্কার খেলা হয়ে থাকলেও বিশ্ব ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বোলারদের নৈপুণ্যও কম না। আর সেই বোলিং ইউনিট যদি হয় বিশ্বসেরাদের কাতারের তাহলে তো কথাই নেই। তেমনই বিশ্বের সেরা বোলিং ইউনিট রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলের। 

ওয়ানডে ক্রিকেট ও টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসি বোলারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাত নম্বরে আছেন জশ হ্যাজলউড। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বোলারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে বার নম্বরে আছেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। সাথে আছেন টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ নম্বর বোলার ও ওয়ানডে দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। 

অস্ট্রেলিয়ার মূল চারজন বোলারই ম্যাচ উইনার। যে কারণে অস্ট্রেলিয়া পাঁচজন বোলার নিয়ে ম্যাচ খেলে না।ম্যাক্সওয়েল, স্টয়নিস অথবা মিচেল মার্শ- পঞ্চম বোলারের কোটা পূরণ করেন উইকেট ও চাহিদা অনুযায়ী। যেহেতু এতে করে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যানও পাওয়া যায়। একইসাথে প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক দুজনই সপাটে ব্যাট চালাতে পারেন।

কামিন্স তার আইপিএল টিম সংরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই মৌসুমে। এছাড়া এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড় হিসেবে কলকাতার হয়ে মাঠে বল হাতে আগুন লাগিয়েছিলেন স্টার্ক। কোয়ালিফায়ারে ম্যাচসেরা হয়ে দলকে তুলেছেন ফাইনালেও। যে কারণে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও বড় চমক দেখাতে পারে অজিরা। 

৪. অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি

অস্ট্রেলিয়া দলটা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী, যে কোন দলকে টেক্কা দেয়ার মতো বোলিং ও ব্যাটিং লাইন আপ আছে। শুধু তাই না, অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াডে বিশ্বের সেরাদের মধ্যে কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা অলরাউন্ড ইউনিটে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। যেমন- গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স, মার্কাস স্টয়নিস, মিশেল মার্শ।

একদিকে তারা যেমন ব্যাটিংয়ে অজিদের অন্যতম ভরসার নাম, অন্যদিকে বল হাতেও সেরাদের কাতারে তারা। যেকোন বিশ্বসেরা ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ জানাতে যেকোন সময় প্রস্তুত থাকে এই অজি বাহিনী।  

৫. বিশ্বসেরা ফিল্ডিং

অন্যান্য দল বিশেষত ব্যাটিং-বোলি ইউনিট শক্তিশালী করার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে থাকে। তবে অস্ট্রেলিয়া এক্ষেত্রে সবার থেকে আলাদা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাধারণত এক একটি রান অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কারণ এই একটি রানই দলের ফলাফল বদলে দিতে পারে।

আর অস্ট্রেলিয়া এই এক একটি রানের দিকে বিশেষ নজর রাখে। প্রতিপক্ষ দলকে আটকে রাখার জন্য অজিদের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বিশ্বসেরা ফিল্ডিং। যেটির জন্য অস্ট্রেলিয়া পুরো বিশ্বে প্রশংসিত হয় প্রায় সময়। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক দলই ভিন্ন কিছু চেষ্টা করে, নতুন কোন অলরাউন্ডার, নতুন কোনও পন্থা অথবা একেবারেই 'আউট অফ দ্য বক্স' কিছু - যা প্রতিপক্ষ ভাবেনি। কিন্তু টিম অস্ট্রেলিয়া প্রায় সবার থেকে আলাদা।

আর সব মিলিয়ে কাগজে কলমে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডের বিশ্বকাপ ধরে রাখার সামর্থ্য রয়েছে। এমনকি মূল স্কোয়াডের বাইরেও রিজার্ভ হিসেবে এমন ক্রিকেটার আছেন যারা বিশ্বের যে কোন দলের সাথে চমক দেখাতে পারেন। আর এমন পরিপূর্ণ স্কোয়াডের কারণে ক্রীড়া প্রেমীদের প্রত্যাশা ওয়ানডে বিশ্বকাপের মত এবার অস্ট্রেলিয় টি-টোয়েন্টিতেও চমক দেখাবে এবং শিরোপা জিতবে।

অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড:

মিচেল মার্শ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগার, ম্যাথু ওয়েড, ক্যামেরন গ্রিন, টিম ডেভিড, মিচেল স্টার্ক, নাথান এলিস, জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স। রিজার্ভ : জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, ম্যাথিউ শর্ট।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭