ইনসাইড ইকোনমি

আসছে বাস্তবতার নিরিখে সংকোচনমুখী বাজেট


প্রকাশ: 23/05/2024


Thumbnail

প্রতি বছরই দেখা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা তার আগের বাজেটের সব লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সক্ষমতার অভাব জেনেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত বারবার এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণের পথে হাঁটত সরকার।

গত এক দশকের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় এমন ধারাবাহিকতাই  পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এবার এই ধারার ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে। আসন্ন বাজেটের বেশিরভাগ সূচকের লক্ষ্যেই প্রথমবারের মতো থাকছে না উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ছাপ। বরং বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার, ঘাটতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, মূল্যস্ফীতির হার, জাতীয় বিনিয়োগ, সঞ্চয়, সরকারি পরিচালন ব্যয় এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলনে বেশ সংযত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার।

বিষয়ে বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আগামী বাজেটটি কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী হবে না। বরং এই বাজেট হবে বাস্তবতার নিরিখে অনেকটা সংকোচনমুখী। এর মানে হচ্ছে, বাজেটের আকার ছোট হবে। সেটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় বড়জোর শতাংশ বাড়বে, যা আগে থেকে ১০ শতাংশ বা তারও বেশি হতো। শুধু বাজেটের আকারই নয়, বরং অর্থনীতির মানদণ্ড নির্ধারক বাজেটের সব সূচক নির্ধারণের ক্ষেত্রেই থাকবে সংযত পদক্ষেপ। যতটা সম্ভব চেষ্টা থাকবে শতভাগ বা তার অনেকটাই কাছাকাছি বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের। সেভাবেই আমরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার প্রায় লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে। এই বাজেটে সরকারের যে পরিচালন উন্নয়ন ব্যয় রয়েছে, তার সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ব্যয় বাড়িয়ে মানুষের সক্ষমতা উন্নয়ন, নগদ ভর্তুকি প্রণোদনা এবং ঋণ বাড়িয়ে মোট দেশজ উৎপাদনকে ত্বরান্বিতকরণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে (এমটিএমএফ) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে দশমিক শতাংশ, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ধরা আছে দশমিক ৫১ শতাংশ। কিন্তু দেশে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে থাকায় সামগ্রিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমেছে। নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান কম হয়েছে। অন্যদিকে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে ভোগ কমে গেছে। এসবের প্রভাব পড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য সংযত সতর্ক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এতে নতুন লক্ষ্য ধরা হচ্ছে দশমিক ৭৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির হার: সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরতে হতো দশমিক শতাংশ। কিন্তু সরকার বাস্তবতা বুঝে সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই দূরে সরে আসছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করতে যাচ্ছে দশমিক শতাংশ, যা প্রাক্কলিত এমটিএমএ এর লক্ষ্যমাত্রা থেকে শতাংশ বেশি।

বিনিয়োগ জিডিপি: ২০২২-২৩ অর্থবছর বিনিয়োগ জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় জিডিপির ৩১ দশমিক শতাংশ। যদিও সেটির লক্ষ্য অর্জন না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ফের লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনতে হয়েছে ২৭ দশমিক শতাংশে। তা সত্ত্বেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অস্বাভাবিক বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঢালি সাজিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। সেখানে তিনি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৩ দশমিক শতাংশ বিনিয়োগ আনার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু এই প্রস্তাবও ধোপে টেকেনি। ফের সংশোধনের মাধ্যমে ২৮ দশমিক শতাংশে নামিয়ে আনতে হয়েছে। এই বাস্তবতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের বিনিয়োগ বা বিনিয়োগ জিডিপি মাত্র . শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এটি সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে দশমিক ৫১ শতাংশ কম।

বাজেট ঘাটতি: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির আকার জিডিপির শতাংশের নিচে রাখতে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বেশ সতর্ক সংযতভাবে হিসাবনিকাশ কষছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছর যেখানে বাজেট ঘাটতি দশমিক শতাংশ ধরা হয়, সেটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও কমিয়ে দশমিক শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। আসন্ন অর্থবছর সরকার ঘাটতির আকারকে জিডিপির দশমিক ৬৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায়। সেভাবেই নতুন বাজেট তৈরি করতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭