ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির মৃত্যু ঘিরে রহস্যময় ৪ প্রশ্ন


প্রকাশ: 23/05/2024


Thumbnail

সম্প্রতি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ বাকি সবার তৃতীয় জানাজা গতকাল ইরানের রাজধানী তেহরানের ইউনিভার্সিটি অব তেহরান ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই জানাজায় অংশ নেয় লাখ লাখ মানুষ। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক্সিকিউটিভ অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহসেন মনসুরি গতকাল জানান, মঙ্গলবার তাবরিজ শহরে প্রথম জানাজার পর রাইসির লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কোম শহরে। সেখানে স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

মনসুরি আরও জানিয়েছেন, রাইসির মৃতদেহ আজ সকালে দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের রাজধানী বিরজান্দে নেওয়া হবে। সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে অষ্টম শিয়া ইমাম রেজার মাজারে রাইসির দাফন অনুষ্ঠান হবে।

এদিকে রাইসির এই রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে ইরান সহ বিশ্বজুড়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরাতে চারটি প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। আলোচিত এই রহস্যময় প্রশ্ন গুলো হলো:

১) মোসাদের সম্পৃক্ততা:

রইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমগুলো ইসরায়েলি দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ী করে আসছে। কারণ ইসরাইল এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদই এক প্রকার ধরতে গেলে রইসির প্রধান শত্রু। এর আগেও ইরানি সেনা কর্মকর্তা কাশেম সোলায়মানিসহ আরও বেশ কয়েকজন সেনা কমান্ডার খুন হন মোসাদের হাতে। এছাড়াও মোসাদ ইরানের সাতজন পরমানু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে।

সিরিয়ায় ইরানি কনসুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত মাসে ইরান ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। এঘটনার প্রতিশোধ নিতেই মোসাদ রাইসিকে খুন করতে পারে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করে। এছাড়াও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবর যখন ইরানি সরকার সঠিকভাবে শনাক্তই করতে পারেনি এবং বিষয়ে কোনো তথ্যও প্রকাশ করেনি, ঠিক তখন ইসরায়েলি গণমাধ্যমগেুলো রাইসির মৃত্যুর খবর ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। এতেই ইরানিদের সন্দেহ, দুর্ঘটনাটি সুপরিকল্পিত এবং এতে মোসাদের হাত রয়েছে।

২) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সন্দেহ:

যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় ইসরাইলের প্রধান মিত্র। ইসরাইলকে সব ধরনের অস্ত্র সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তাই রইসির এই নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সন্দেহও প্রবল। তাছাড়া যে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। যে কারনে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারছে না ।

৩) ইরানের অভ্যন্তরীন রাজনীতি:

বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তাঁর বয়স প্রায় ৮৫। ধারণা করা হচ্ছিল খামেনির পরই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ছিল রাইসির। কিন্তু এর পরের স্থানে যার নাম প্রকাশ্যে আসছিল সে হলে খামেনির ছেলে মোস্তবা খামেনি। সুতরাং এখন বলা যায় যে, রাইসির মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন খামেনির ছেলে মোস্তবা খামেনি। তাছাড়া যে হেলিকপ্টারটির আকাশে ওড়ার প্রাথমিক যোগ্যতা ছিল না সেই হেলিকপ্টারটি ইরানি কর্মকর্তারা কেন রাইসিকে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিল সে বিষয়েও রয়েছে যথেষ্ট রহস্য।

৪) ইরানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্তা:

কিছু কিছু মহল মনে করে ইরান বিরোধী কট্টরপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী ‘জয়শাল আদিল’ এই ঘটনার সাথে জড়িত। তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রাইসির হেলিকপ্টারটি ধ্বংস করতে পারে বলে অনেকের ধারণা। কারন অতীতে এই ইরানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীটি এধরনের হামলা চালিয়েছে। তবে এ সংগঠনটির অবস্থান পাকিস্তান সীমান্তে। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে তাদের কোন কার্যক্রম নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো শিঘ্রই মিলবে। ইরানসহ বিভিন্ন দেশ এ ঘটনায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সে কারণে দ্রুতই এ রহস্যের সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭