ইনসাইড বাংলাদেশ

জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে আমলারাই ক্ষমতাবান


প্রকাশ: 23/05/2024


Thumbnail

জাতীয় সংসদের সদস্যরা সবসময় শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা পান। কিন্তু এবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি দেওয়া হবে কি না এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের গাড়িতে অন্ততপক্ষে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের একটি প্রস্তাব এনবিআর বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

জনপ্রতিনিধিরা দেশে আইন প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র। কাজেই সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সার্বভৌম। আর সার্বভৌম সংসদের প্রতিনিধিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি পেলে রাষ্ট্রের কতটুকু ক্ষতি হবে, তার চেয়েও বড় কথা হল এই প্রণোদনা তাদের জনগণের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু সেই চেষ্টায় এবার বাগড়া দিয়েছেন আমলারা। তারা মনে করছেন কৃচ্ছ্রসাধনের এই সময়ে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা দেওয়া উচিত না। কেউ কেউ এটাকে অনৈতিকও বলছেন। এটি নিয়ে যখন আলোচনা এবং বিতর্ক ঠিক সেই সময় চলমান অর্থ সংকটের মধ্যে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ৩৮১ কোটি টাকা ৫৮ লাখ টাকার ২৬১ টি নতুন জীব গাড়ি কেনা হচ্ছে। অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এসব গাড়ি কেনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। 

তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে, আমলাদের জন্য কি দেশে অর্থ সংকট নেই? আমলাদের জন্য কি কৃচ্ছতার নীতি প্রযোজ্য নয়। আমলারা অবশ্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের বিচার করা যায় না। কারণ আমলা অপরাধ করলে তার বিভাগীয় তদন্ত হয় বিভাগীয় তদন্তে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয় পদোন্নতি আটকে দেয়া অথবা একটি ইনক্রিমেন্ট কমিয়ে দেওয়া। তারপরও তারা সেটির বিরুদ্ধে আপিল করেন। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেন এবং এসব আবেদন গৃহীত হওয়ার পর তাদের দণ্ড মওকুফ করা হয়। আর দুর্নীতি দমন কমিশনও সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন আমলাকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। বিচারের আওতায় আনতে পারেন না।

আমলারা এখন জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। সরকার আমলাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য ১৯৭৯ সালের আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগও সফল হয়নি। যখন সরকার কৃচ্ছতা সাধন বাস্তবায়নের জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করছেন, তখন আমলারা দিব্যি সরকারি খরচে বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর যে সময়ে জনপ্রতিনিধিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা রহিত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত প্রায় ঠিক সেই সময় আমলাদের জন্য প্রায় চারশ কোটি টাকার জিপ গাড়ি তাও আবার মাঠ আমলাদের জন্য ক্রয় করা কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

এর আগে আমলাদেরকে বিনা সুদে গাড়ির লোন সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। সেই গাড়ি গুলো আমলারা বেশির ভাগ উবারে ব্যবহার করছেন, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। গাড়ির জন্য মাসে মাসে ৫০ হাজার করে টাকাও নিচ্ছেন। অথচ তাতে সরকারি গাড়ি বা সরকারি তেলের তোন সাশ্রয়ী হচ্ছে না। একেক আমলা সুদ মুক্ত গাড়ি কিনছে। আবার একাধিক সরকারি গাড়িও ব্যবহার করছেন। এ রকম অবস্থা যখন চলছে তখন আমলাদের রাজত্ব ভালো ভাবে অনুভব করছে গোঠা বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক এই সংকটের মুখে আমলাদের জন্য ২৬১ টি গাড়ি কেনা কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন যেমন উঠেছে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে, আমলারা কি তাহলে জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান? আমলারা কি তাহলে দেশ চালাচ্ছেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭