ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিদায় লিবারেল দুনিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/04/2018


Thumbnail

ফ্রান্সের দার্শনিক ভলতেয়ার হাজার বছরের পুরনো পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি পবিত্র নয়, নয় কোন রোমান অথবা কোন সাম্রাজ্য। একই ভাবে আড়াইশ বছর পর ম্লান হয়ে পড়া লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার সম্পর্কে বলতে হয় এতে কোন উদারতা নেই, এটি বৈশ্বিক নয়, আর এতে শৃঙ্খলাও নেই।

যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছিল লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার। এর উদ্দেশ্য ছিল ৩০ বছরের মধ্যে সঙ্ঘটিত দুই বারের বিশ্বযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক দেশগুলো এক উদার আন্তর্জাতিক পদ্ধতি তৈরি করতে চাইলো। যেখানে আইনের শাসন থাকবে। দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা হবে। মানবাধিকার রক্ষা করা হবে। এবং পুরো গ্রহে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে। তাই এখানে সকলের অংশগ্রহণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানও তৈরি করা হলো।

আর এসব কিছুকেই সমর্থন দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়ার অর্থনৈতিক ও পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হলো লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার। শুধু গণতন্ত্রের আদর্শের উপরই এটি নির্ভরশীল ছিল না।এর পেছনে ছিল কঠিন ক্ষমতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। আর তখনই লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু ২৫ বছর পর আজ এর ভবিষ্যৎ সন্দিহান। এর তিনটি স্তম্ভ হলো উদারনীতি, সার্বজনীনতা, এবং সংরক্ষণ। আর এই স্তম্ভগুলোই আজ হুমকির মুখে।

এখন বিশ্বকে এক সঙ্গে কল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পৃথিবী আঞ্চলিক ভাবে পৃথক হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য সংকটে এই বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট।

একই সময়ে শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ফিরে আসছে। রাশিয়া সীমান্তে সেনা পাঠিয়ে প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে মৌলিক শান্তিরক্ষার নিয়ম ভেঙ্গেছে।  উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য ভঙ্গ করেছে।  সিরিয়া ও ইয়েমেন মানবিক দুঃস্বপ্নের দেশে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ তেমন কিছুই করতে পারেনি। ভেনিজুয়েলা ব্যর্থ  রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আজ পৃথিবীতে প্রতি একশ জনে এক জন হয় উদ্বাস্তু বা অভ্যন্তরীণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আলাদা করে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন ও জাপানের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের কাজের জন্য কিংবা যে সব ক্ষেত্রে তারা নীরব থেকেছে সেই কারণে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ কোন রাষ্ট্র নয়। তাঁদের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার। তারাই একে সমর্থন দিয়েছে। আর তারাই এই ব্যবস্থা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।

লেখক রিচার্ড এন. হ্যাসঃ সভাপতি, পররাষ্ট্র সম্পর্ক পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র

বাংলা ইনসাইডার/ডিজি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭