ইনসাইড পলিটিক্স

ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাদ্দাম-ইনান?


প্রকাশ: 27/05/2024


Thumbnail

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের প্রতি ছাত্র সমাজের প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিল ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সাদ্দাম-ইনান সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। তাদের দায়িত্ব কালেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ডাকাতির মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রলীগ নেতা আটক হয়েছেন। এছাড়া সাদ্দাম-ইনানের নানবিধ কার্যকলাপ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং সংগঠনে আদর্শ নৈতিকতা চর্চায় ঘাটতি থাকায় একের পর এক অপকর্মে জড়াচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে সাদ্দাম-ইনান কী ছাত্রলীগের হাল ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন?

হলের সিট দখল, হল নিয়ন্ত্রণ: ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে হল, আসন পান না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চিত্র বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার সুবাধে অছাত্ররা আবাসিক হলের এক/একাধিক আসন দখল করে আছেন।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অছাত্রদের হল ত্যাগের আলটিমেটাম দিলেও তা কর্ণপাত করেনি ছাত্রলীগের অছাত্র নেতা কর্মীরা।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বড় সমস্যা সিট বাণিজ্য। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আবাসিক হলের ছাত্রদের সিট দিতে বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ অনেক দিনের।

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু) সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সহ অনেক অছাত্র নেতা হলে দাপটের সঙ্গে অবস্থান করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অছাত্র বহিষ্কৃতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছিল চবি প্রশাসন। কিন্তু তা কার্যকর করতে পারে নি।

অহেতুক সংঘর্ষে  জড়ায় ছাত্রলীগ: ছাত্রলীগ এখন যৌন হয়রানি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, মাদকের কারাবারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। শক্তিশালী সমগোত্রীয় বিরোধী ছাত্র সংগঠন না থাকায় ছাত্রলীগ নানা গ্রুপ, উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে। এর নেপথ্যেও আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, হলের সিট নিয়োগ বাণিজ্য টেন্ডারবাজির মতো বিষয় জড়িত। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চায়ের দোকানে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ছাত্রলীগের ৮০ জন আহত হয়। এসবের বাইরেও সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষসহ নানা অপকর্মে জড়ানোর সংবাদ প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে আসতে দেখা যায়।

ধর্ষণ কাণ্ড : সম্প্রতি ক্যাম্পাসে কৌশলে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের কক্ষে আটকে রাখে জাবি শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। পরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের এই নেতা। মোস্তাফিজুর রহমানকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা দম্পতিকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে।

মাদকের কারবার মাদক সেবন: ফেব্রুয়ারি র‌্যাব ব্রিফিং জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা যে তথ্য পেয়েছে তা অ্যালার্মিং। ক্যাম্পাসে মাদকের ব্যবসা কেনাবেচা হয় প্রকাশ্যেই। মাদক ব্যবসায় লেনদেনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এছাড়া অনেক ছাত্রলীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মাদক সেবন মাদক কারবারের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

টেন্ডারবাজি নিয়োগ বাণিজ্য: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি  আকতারুজ্জামান সোহেল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার গুঞ্জন প্রকট হচ্ছে। কিছুদিন আগে লিটনের বিরুদ্ধে তারই অনুসারীরা নানাবিধ অভিযোগ এনে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের যোগসাজশে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ একটি চক্র নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজে বিভিন্ন ঠিকাদারের থেকে সালামি নেবার বিষয়টি এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়োগ বাণিজ্য টেন্ডারবাজিতে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাদের বিষয়ে ছাত্রলীগ জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাস করে। অপরাধীদের বিষয়ে আমরা আমাদের নীতি-আদর্শ অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।

এদিকে ২৪ মে (শুক্রবার) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অপরাধীকে আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখি। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭