ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দুই বাস্তবতার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/04/2018


Thumbnail

চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস ‘এ টেইল অব টু সিটিস’ এর শুরুটা আজও সর্বজনীন। তিনি বলেছেন, ‘এটাই সময়ের সব থেকে ভালো আর এটাই সময়ের সব থেকে খারাপ।‘এটা জ্ঞানের যুগ এটাই নির্বুদ্ধিতার যুগ। এটা আশার বসন্ত, আর এটাই হতাশার শীত।’

ডিকেন্সের লন্ডন ও প্যারিস ভিত্তিক ফরাসী বিপ্লবের ক্লাসিক উপন্যাসটিতে একনায়কতন্ত্র, সামাজিক অবিচার ও ফরাসী বিপ্লবের বাড়তি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রায় দুই শতাব্দী পর চীনের প্রিমিয়ার ঝৌ এনলাইকে ফরাসী বিপ্লব সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হয়। তিনি তখন বলেছিলেন, এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষাপটে করা এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় ডিকেন্স যে সময় নিয়ে লিখেছেন তিনি ওই সময়ের বিরোধী ছিলেন।

যে আলোকিত আদর্শের ভিত্তিতে ফরাসীরা রাজা ষোড়শ লুইএর বিরুদ্ধে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওই একই আদর্শে যুক্তরাষ্ট্রেও বিপ্লব সংগঠিত হয়। আর দুটি বিপ্লবই শিল্পায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছে।

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আনগুস ম্যাডিসন হিসেব করে দেখেছিলেন ১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যে মাথা পিছু আয় দ্বিগুণ হয় নি। কিন্তু ১৮২০ থেকে ২০০৮ এর মধ্যেই মাথাপিছু আয় ১০ গুণ বেড়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে আর্থসামাজিক অন্যান্য সূচকেও একই রকম বৃদ্ধি দেখা  দেখা যায়। গত দুইশ বছরে মানুষের আয়ুষ্কালের বৈশ্বিক গড় বেড়ে ৩১ থেকে ৭৩ বছর হয়েছে।

দুই শতাব্দী পূর্বে জীবাণু তত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। তখন ধারণা করা হতো গোমাংসের গন্ধ শুকলে মানুষ মোটা হয়ে যায়। এমন ধারণা এখন হাস্যকর। এখনকার বৈজ্ঞানিক ধারণার বিকাশে এমনটা সম্ভব হয়েছে। এখন মানুষের জিন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। জিন পরিবর্তন এবং এতে নানা গুণাগুণ যোগ বিষয়ে গবেষণা চলছে।

নোবেল বিজয়ী লেখক আঙ্গুস ডেটন তাঁর ২০১৩ সালে গ্রন্থ ‘দ্য গ্রেট এস্কেপে’ দেখিয়েছেন কিভাবে দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, অপমৃত্যু পূর্বের আড়াইশ বছরে মানব সামাজিক জাতিগুলোকে ভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। একই ভাবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বিশ্বের সর্বত্রই বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নাগরিকরা সকল চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছে না।

আজকের সমসাময়িক জ্ঞানের সঙ্গে সংঘটিত আন্দোলনগুলোর যোগসূত্র পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের   কর নীতি ধনীদের কাটছে না। এতে দরিদ্ররাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ট্রাম্প পণ্যে শুল্ক আরোপ করে চীনকে পৃথক ভাবে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলার চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’   পলিসি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর বৈশ্বিক ঐক্যকে  ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।  আঠারো শতকের জাতীয়তাবাদী চেতনা সম্ভবত সব থেকে বড় ক্ষতি করেছে। এই চেতনায় ,মানুষ অন্য দেশের  জনগণকে হুমকি মনে করে।

একই ভাবে বিংশ শতাব্দীর সকল উন্নয়ন ও আবিষ্কার আশীর্বাদ নিয়ে আসেনি। আইনস্টাইনের তত্ত্ব এবং ফিসনের আবিষ্কারের ফলে ১৯৩৮ সালে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কৃত হয় এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এই বোমা ফেলা হয়। ফুকোসিমার চেরনোবিলে দুর্ঘটনা ঘটে। একই ভাবে বিভিন্ন সাইবার অ্যাটাকে জাতীয় কাঠামো বারবার হুমকিতে পড়েছে।

আর এ সবকে ছাপিয়ে সব থেকে বড় হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। তবে সংমিলিত নানা কাজের মাধ্যমে এই ঝুঁকি উপশম করা সম্ভব। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার আমাদের এই হুমকিতে নিয়ে এসেছে। আর বিজ্ঞান দিয়েই আমরা এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।


লেখক: জাভিয়ার সোলানা, প্রেসিডেন্ট, ইএসএডিই সেন্টার ফর গ্লোবাল ইকোনমি অ্যান্ড জিওপলিটিক্স

বাংলা ইনসাইডার/ডিজি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭