ইনসাইড বাংলাদেশ

কোথায় যাবেন তারেক জিয়া?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/04/2018


Thumbnail

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার যে আর বেশিদিন লন্ডন থাকা হচ্ছে না, তা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায়) যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দেওয়া এক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, যেভাবেই হোক তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁর সাজা কার্যকর করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে কথা হয়েছে।’ যারা শেখ হাসিনাকে বিন্দুমাত্র চেনেন, তাঁরা জানেন, শেখ হাসিনা যা বলেন, তা তিনি করেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটিশ সরকার এই মুহূর্তে নানা অপবাদে কলঙ্কিত তারেক জিয়াকে সেদেশে রাখার ঝুঁকি নেবে না। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছাড়লেই যে তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফিরবেন বা তাঁকে ফিরতে বাধ্য করা হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্রিটিশ প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত কোনো বিদেশির জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় যদি বাতিল করা হয়, তখন তাঁর স্বদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার অভিপ্রায় আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই আশ্রয় গ্রহণকারীকে যদি তৃতীয় কোনো দেশ নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং আশ্রয়কারীর যদি তাতে সম্মতি থাকে, তাহলে তাঁকে ওই তৃতীয় দেশেই পাঠানো হয়। জোর করে নিজ দেশে প্রেরণ করা ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। তারেক জিয়া সম্ভবত আইনের এই সুযোগটি নেবেন। যুক্তরাজ্য সরকার যখন তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে, তখন তৃতীয় কোনো দেশ যদি তাঁকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়, তাহলে তারেক জিয়ার দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত হবে।

একাধিক সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্য যদি তারেক জিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় তবুও তারেক দেশে ফেরার ঝুঁকি নেবে না। প্রশ্ন হলো, কোথায় যাবে ইন্টারপোলের খাতায় ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত তারেক জিয়া?

দুটি মামলায় দণ্ডিত, জঙ্গি তৎপরতাকে উস্কানি ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে। তারেক জিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেবে না, এটা নিশ্চিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের কোনোদিন ভিসা দেবেন না, সেই তালিকায় রয়েছেন তারেক জিয়া। এফবিআইয়ের তালিকায় তারেক ভয়ংকর সন্ত্রাসী। দুই মামলায় দণ্ডিত হবার কারণে ইউরোপের কোনো দেশ তাঁকে নিতে পারবে না। যুক্তরাজ্যে তাঁর ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বাতিল হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত কোনো দেশে তারেক জিয়াকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিতে পারবে না। তারেক জিয়ার পছন্দের দেশ সিঙ্গাপুর। কিন্তু সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশন আইন ২০০৮ সালে অনেক কড়াকড়ি হয়েছে। এখন অন্যদেশে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে দীর্ঘমেয়াদি প্রবেশাধিকার পায় না। মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিপুল ব্যবসা এবং সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকায় প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানও মালয়েশিয়ায় থাকতে পারেননি। 

তারেক জিয়াকে নিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী পাকিস্তান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের ‘শেষ প্রতিনিধি’ বলা হয় তারেক জিয়াকে। কিন্তু তারেক জিয়া পাকিস্তানে গেলে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যাবে, সে কারণেই তারেক পাকিস্তান যেতে আগ্রহী হবে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে তারেক জিয়ার বিপুল সম্পদ রয়েছে। সম্পদ আছে কাতারেও। তবে, তারেক জিয়া ব্যক্তিগতভাবে সৌদি আরব যেতে আগ্রহী নন। ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জিয়া পরিবারকে সৌদি আরব পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তারেকের আপত্তির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দর থেকে বেগম জিয়ার ১২২টি স্যুটকেস ফেরত আনতে হয়। এখন তারেক জিয়ার সামনে একটি বিকল্প আছে সেটা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউএইর দুবাই এবং শারজায় তারেক জিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। দুবাই ট্যাক্স হ্যাভেন হওয়ার কারণে তারেক লন্ডনের চেয়ে এখানেই থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু মেয়ে জাইমার লেখাপড়ার জন্যই মূলত তারেক লন্ডনে ছিলেন। দুবাইতে কালো টাকা, আন্তর্জাতিক চোরাচালানের অবৈধ অর্থ এবং সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য। দাউদ ইব্রাহিমের মতো বিশ্বের সেরা ডনরা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ইউএই আইন অনুযায়ী, ওই দেশে কোনো অপরাধ না করলে আপনি যত বড় অপরাধীই হন না কেন, আপনাকে কেউ বাধা দেবে না। তাই তারেক জিয়ার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ‘দুবাই’ স্বর্গরাজ্য। যুক্তরাজ্য থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর তারেকের পরবর্তী ঠিকানা কোথায় হবে, দুবাই নাকি অন্য কোনো দেশ? নাকি শেখ হাসিনার অন্যসব সাহসী সিদ্ধান্তের মতো তারেক জিয়াকেও তিনি দেশে ফেরাতে পারবেন? 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭