ইনসাইড আর্টিকেল

কে হবেন নতুন দলের নেতা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/04/2018


Thumbnail

রাজনৈতিক অঙ্গনে এতদিন দুটি বিষয় আলোচনায় ছিল। প্রথম বিষয়টি হলো, সরকার বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়টি হলো, আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় জোট তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু গত কয়েকদিন রাজনীতির নেপথ্যে আলাপ আলোচনায় অন্যরকম মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য সুশীল সমাজের পৃষ্ঠপোষকতার একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সুশীল সমাজের কেউ কেউ বিএনপির মধ্যে থেকে মর্ডারেট এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের একটি অংশকে নতুন দলে টেনে আনার চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টার প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত শনিবার। ওই দিন ড. কামাল হোসেন সাত দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সাত দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দলীয় পদ ছাড়তে হবে। গত শনিবার প্রেসক্লাবে ড. কামাল হোসেন এই সাত দফা প্রস্তাবে পেশ করেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ এই সাত দফা প্রস্তাব প্রণয়নে মূল ভূমিকা পালন করেছে। যাদের মধ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং দুজন সম্পাদক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে ওই প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও, বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য সহ একাধিক মধ্যপন্থী দলের নেতাদের সঙ্গে এই সাত দফা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ড. কামাল হোসেন এই সাত দফা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

দেশের সুশীল সমাজের এই অংশই ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবাধয়ক সরকারকে ক্ষমতায় আনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে , তাঁরা বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যেভাবে দেশ চলছে, তাতে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন , মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং সুশাসনের সংকট প্রবল। এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। বিএনপি এলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তাছাড়া তাঁরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে বিএনপির একটি বড় অংশের অবস্থান স্পষ্ট নয়।

একাধিক সূত্র বলছে, সুশীল সমাজ গত বছরের শেষ থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক ফ্ল্যাটফর্ম গঠনের উপায় নিয়ে কাজ করছিলেন। প্রথমে তাঁরা বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি মোর্চা বা জোট করার কথা ভাবছিলেন। পরে তারা দেখেন, দেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে যে দলগুলো আছে সেগুলোর কোনো আবেদন নেই। এ কারণেই তারা সব দল ভেঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক দল করার কথা ভাবছে। এই দলের ভিত্তি হবে সাত দফা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সুশাসন হবে এই দলের ভিত্তি, এমনটাই জানিয়েছেন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা একজন বুদ্ধিজীবী। এই দলের প্রধান নেতা কে হবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও এই দলের প্রধান হিসেবে ভাবা হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে যাঁরা এই উদ্যোগের রূপ পরিকল্পক তাঁরা এদের কেউই নেতা হিসেবে চমক জাগাতে পারবে না। কারণ এরা সবাই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার মতো গণমানুষের মধ্যে আবেগ সৃষ্টি করতে পারেন নি। সুশীল সমাজ এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজছেন, যাঁকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আবেগ তৈরি হতে পারে আর রাজনৈতিকভাবে যার বিপুল গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এই বিবেচনায় সুশীলদের পছন্দ নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে। কিন্তু তিনি রাজি হবেন কিনা সেও এক প্রশ্ন। তবে, সুশীলরা তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। একজন বলেছেন, আওয়ামী লীগেও এমন কিছু নেতা আছেন, যাঁরা মুখে সব সহ্য করছেন, কিন্তু কিছু করতে পারছেন না। এটা তাঁদের জন্যও একটা মঞ্চ হতে পারে। সুশীল সমাজ বলছে, আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় থাকার ‘অন্ধ মোহে’ সেক্যুলার চরিত্রসহ সব ভালো গুণগুলো খুইয়েছে। এজন্য সত্যিকারের একটা জনতার দলের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এমন চেষ্টা। তবে, সুশীলদের এই উদ্যোগে খুব একটা আশা দেখছেন না রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তাঁরা বলছেন, সুশীলরাই জনসম্পৃক্ততাহীন। বইয়ের পড়া আর বাস্তবতা সব সময় এক নয়। রাজনীতির মাঠে এরা কিছুই করতে পারবে না। এটা হবে নির্বাচনের আগে সুশীলদের আরেক প্রহসন।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭