ইনসাইড থট

ভাটি অঞ্চলের খাঁটি মানুষ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/04/2018


Thumbnail

ভাটির মাটি, কাদা ও জলে মাখামাখি করে বড় হয়ে ওঠা একজন খাঁটি মাটির মানুষ । তাঁর কথা বলার ভঙ্গি, রসিকতার ছলে বক্তব্য দেওয়া তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসন দিয়েছে। তিনি ইটনা, অষ্টগ্রাম আর মিঠামইন অঞ্চলের চার পুরুষের নেতা। ভাটি অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের অতি আপনজন। দরদী এই মানুষটি ভাটি অঞ্চলের সকলের অত্যন্ত প্রিয় হামিদ ভাই।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ১৯৪৪ সালের পয়লা জানুয়ারি কামালপুরের মিঠামইন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা মোছা. তমিজা খানম। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে মো. আব্দুল হামিদ তৃতীয়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ স্কুল জীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হয়।

আমার শৈশব কাল থেকেই আমি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ ভাইকে চিনি। তিনি কিশোরগঞ্জ কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন আর রাজনীতি করতেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনেক স্নেহধন্য ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিও মো. আব্দুল হামিদের মধ্যে আমরা লক্ষ্য করি।

কিশোরগঞ্জের যেকোনো মানুষ যে মো. আব্দুল হামিদের সান্নিধ্যে এসেছে একবার, অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানেই সে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যেত। মানুষকে আপন করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে আমাদের রাষ্ট্রপতির। যে গুণটি ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

মো. আব্দুল হামিদ অত্যন্ত সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত। সাধারণ মানুষদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্যেই তিনি রাজনীতি করেন। তাঁর নিজের ব্যক্তিগত সুখ সুবিধার কথা তিনি কোনোদিন ভাবেন না। রাষ্ট্রপতি হবার আগে একবার নির্বাচন চলাকালীন সময়ে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু তিনি নির্বাচনের প্রচারণা ছেড়ে চোখের চিকিৎসা করাতে রাজি নয়। তাঁকে সেই সময় আমরা এক প্রকার জোর করেই ঢাকা এনে চোখের চিকিৎসা করাই। ঘটনাটা উল্লেখ করলাম রাজনীতি ও মানুষের প্রতি মো. আব্দুল হামিদ কতটা নিবেদিত প্রাণ তা বোঝানোর জন্য। আমার সৌভাগ্য যে আমি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগমের চিকিৎসা করেছি।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের প্রতিটা মানুষের জন্য ছিল উম্মুক্ত। সন্ধার পর তাঁর বাসায় চলত রাজনৈতিক আলোচলা, হাসি ঠাট্টা ও আড্ডা। সেই আড্ডা শেষ হত গভীর রাতে। কিশোরগঞ্জের রাজনীতি মো. আব্দুল হামিদকে ঘিরেই আবর্তিত হত। মো. আব্দুল হামিদ কিশোরগঞ্জের উন্নয়নের জন্য নানা রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতেন যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

কিশোরগঞ্জের মাটি এখনো বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নৌকার ঘাঁটি। হাওড় বেষ্টিত কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আদর্শ প্রচার ও অনুপ্রাণিত করে সে আদর্শ এখনো ধরে রেখেছেন যে ব্যক্তিটি তাঁর নাম মো. আব্দুল হামিদ।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ কিশোরগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। এই মেডিকেল কলেজে অত্র অঞ্চলের গরিব ও দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এই মেডিকেল কলেজে সুনামের সহিত ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে।

অত্র এলাকার লোকজন কিশোরগঞ্জের মানুষদের অভিভাবক মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে। কিশোরগঞ্জের মানুষ বিপদে আপদে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হন। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেন তাঁদেরকে। মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন মনোযোগ দিয়ে এবং চেষ্টা করেন সমাধানের। আবার অনেক লোক আছে যাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই রাষ্ট্রপতির কাছে, একবার একটুখানি দেখা করে কথা বললেই তাঁরা খুশি। ৩০ বছর আগের মো. আব্দুল হামিদ আর বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

মো. আব্দুল হামিদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো উনি অতি সহজেই ছোট বড় সকল মানুষের সাথে খুব সহজেই কম সময়ে মিশে যেতে পারেন। রাষ্ট্রপতি হবার পরেও স্যার বলাটা তিনি পছন্দ করেন না। তাই প্রায় সকলেই তাঁকে ভাই বলেই সম্মেধন করে।

আরেকটি কথা রাষ্ট্রপতি সমন্ধে না বললেই নয়। তিনি অনেক সময়ই তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, তিনি ছাত্র হিসেবে খুব ভাল ছিলেন না। কথাটি আমরা যারা তাঁকে কাছে থেকে জানি বা চিনি তাঁরা জানেন মো. আব্দুল হামিদ কতটা মেধাবী, বুদ্ধিমান ও দুরদর্শী।

আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা দিয়ে এই লেখার সমাপ্তি করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। আমি মহাখালিতে মহাপরিচালকের চেয়ারে বসার আগ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পিএসকে ফোন দিয়ে রাষ্ট্রপতির দোয়া নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাথে সাথে আমার সাথে কথা বলে আমাকে দোয়া ও উপদেশ দেন। সেই সাথে আমার সফলতাও কামনা করেন। সেদিন সেখানে উপস্থিত সকল কর্মকর্তাবৃন্দ রাষ্ট্রপতির সেই কথা ও উপদেশ শোনেন। সেদিনের ঘটনা আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ও ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। আমার মতো একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সামান্য ইচ্ছা প্রকাশে, রাষ্ট্রপতির মত এত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও সাড়া দেওয়া থেকে বোঝা যায় আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ মানুষের ভালবাসার কি পরিমাণ গুরুত্ব প্রদান করেন।

হাওড় অঞ্চলের মানুষের প্রতি ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মো. আব্দুল হামিদ। মো. আব্দুল হামিদের মত জনসম্পৃক্ত এবং জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশ ও তার প্রিয় হাওড়বাসীর হৃদয়াকাশে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।

লেখক: খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, দ্বীন মোহাম্মদ আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭