কালার ইনসাইড

নাটক-সিনেমার পার্শ্ব চরিত্ররা নিখোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/04/2018


Thumbnail

‘একটু হেসে বলনা আপা কেমন হবে? এক গাড়ীতে পরিবারের সবাই রবে…’ গানটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? আমাদের প্রিয় নায়ক সালমান শাহ অভিনীত পারিবারিক সুখ দুঃখের গল্প নিয়ে মালেক আফসারি পরিচালিত ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবির। সিনেমায় প্রয়াত খলিল ছিলেন সালমানের শ্বশুড় চরিত্রের। সালমানের নায়িকা ছিলেন নবাগতা বৃষ্টি। ভাইয়ের চরিত্রে ছিলেন আলীরাজ। আলিরাজের বিপরীতে ছিলেন তমালিকা কর্মকার । তমালিকার চরিত্রটি ছিল নেগেটিভ চরিত্রের অর্থাৎ একজন উচ্চবিলাসি, লোভী, হিংসুকে নারী যে তাঁর স্বামীকে অবৈধভাবে টাকা রোজগারে বাধ্য করে । প্রয়াত দুই গুণী বুলবুল আহমেদ ও রোজী আফসারি ছিলেন ছবিতে আলিরাজ ও সালমানের বড় বোন ও দুলা ভাই চরিত্রে। রোজী ছিল গল্পের প্রান। ছবিটা আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর চাওয়া পাওয়া না পাওয়া’র বাস্তবের একটা চিত্র। সিনেমার ছোট বড় কোন চরিত্রকেই আপনি ফেলনা বলতে পারবেন না।

অনেকে বলেন পার্শ্ব চরিত্র বলতে কিছু নেই। কিন্তু নাটক- সিনেমার টার্মের খাতিরে হলেও এটাকে স্বীকার করতে হবে। মূল চরিত্রকে যারা বেগমান করে তাদেরই পার্শ্ব চরিত্র বলা হয়ে থাকে। একটা সময়ে পারিবারিক সিনেমার জোয়ারটা একটু বেশি ছিল। ক্রমে যা কমে গেছে। পারিবারিক সিনেমার ক্ষেত্রে যেটা হতো ফুল ফ্রেম ভর্তি অভিনয়শিল্পী থাকতেন। এটা নাটক কিংবা সিনেমা দু ক্ষেত্রের জন্যই বলা যায়। বর্তমান সময়ে গল্প বলার ঢং বদলিয়েছে। কে যেন সেদিন বললো এখন নাটক দেখলে মনে হয় ,‘ পৃথিবীতে শুধু তারা দু-জনই বাস করে। আশেপাশে আর কেউ নেই। তারাই চলে-বলে- রাগ- ভালবাসা- মিলন- বিচ্ছেদ করে। তাঁদের যেমন থাকে না পরিবার। তেমনি থাকে না বন্ধু- বান্ধব। নাটকের ক্ষেত্রে সব পরিচালকের একই উত্তর, বাজেট স্বল্পতার কারণে স্ক্রিপ্ট লেখার সময়ই এমনটা করা হয়। ছোট চরিত্র ছোট করা হয়। তবে সিনেমার ব্যাপারটা ভিন্ন।

সিনেমায় ক্রমে পার্শ্ব চরিত্রের অবমূল্যায়ন শুরু হয়েছে। পার্শ্ব চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রথমেই বাবাদের কথা বলতে হয়। একটা সময়ে চলচ্চিত্রে বাবাদের নানাভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। কখনও কঠোর, কখনও স্নেহময়, কখনও আদর্শবাদী আবার কখনও তারা বিপথগামী। তবে বাবা অথবা সন্তান যেই বিপথগামী হোক না কেন সিনেমার শেষ পর্যায়ে তারা ফিরে আসে একে অন্যের কাছে। হয়তো যে কোনো একজন বা দুজনের মৃত্যুতে পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁদের দ্বন্দ্বের। আবার কখনও ঘটে মধুরেন সমাপয়েৎ। বর্তমান সিনেমায় এই চরিত্রের শক্তিটা নেই বললেই চলে। নামকাওয়াস্তে কাউকে সিনেমায় নেয়া হয়। কিন্তু দাগ কাটার মতো কোন চরিত্র থাকে না।

একটা সময়ে সিনেমার চিত্রনাট্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাবার চরিত্র। পর্দায় দাপুটে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফতেহ লোহানী, খলিল, গোলাম মুস্তাফা, দারাশিকো, আবদুল মতিন। আদর্শবাদী বাবার ভূমিকায় মানানসই ছিলেন আনোয়ার হোসেন, প্রবীর মিত্র, রাজ্জাক, আলমগীর, খান আতা। পরবর্তীতে রাজীব, আহমদ শরীফ খলনায়ক থেকে রাগী বাবার ভূমিকায় দর্শকপ্রিয়তা পান। বাবা- সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে যে কত সিনেমা তৈরী হয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না।

বাবার চেয়ে মায়ের চরিত্রও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কখনো কখনো নায়ক-নায়িকাকে ছাপিয়ে ‘মা’ হয়ে যান গল্পের মধ্যমণি। অনেকে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান। দরিদ্র -খ্যাপাটে, মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন রানী সরকার। তেমনি সাদাসিধে মধ্যবিত্ত পরিবারের শহুরে মা কিংবা গ্রামের মা ভূমিকাতে মিনু রহমানের অভিনয় ছিল অনবদ্য। আবার অভিজাত ঘরের অহংকারী মায়ের চরিত্র মানেই ছিলেন মায়া হাজারিকা। কূটচাল, ষড়যন্ত্র এবং ছবির শেষে বরাবরই নিজের ভুল বুঝতে পারা রুপালি পর্দার মা ছিলেন মায়া হাজারিকা। বাংলার স্নেহময়ী মায়ের চরিত্র পর্দার ফুটিয়ে তোলার জন্য আয়েশা আখতার ছিলেন অনবদ্য। সারল্য, মমতা, সন্তানের জন্য আকুতির ক্ষেত্রে অনবদ্যভাবে মার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আয়েশা আখতারের বিকল্প ছিল না। বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক জনপ্রিয় মা ছিলেন রোজী আফসারি। বোনের চরিত্রেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। কয়েক দশক ধরে রওশন জামিল মন্দ মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন। আনোয়ারার কথা আলাদা করে কিছু বলার নেই। শুধু মাত্র মা নন। দাদির চরিত্রেও তিনি অনবদ্য। সহজ, সরল, সাদাসিধে, আটপৌরে, মধ্যবিত্ত মায়ের চরিত্রে রেহানা জলি মিলে মিশে একাকার হয়ে যান। রেবেকা, ডলি জহুর, সুমিতা দেবী,  রিনা খান, সুচন্দা, শর্মিলী, দিলারা জামান, মিরানা জামান, সুলতানা জামান, শবনম, শাবানা, ববিতা, সুচরিতা, সুজাতাসহ অনেকেই মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক ভালোবাসা ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।

শুধু যে মা-বাবার চরিত্র শক্তিশালি ছিল তা নয়। একটা সময়ে গল্পের খাতিরে ভাই বন্ধু সহ আরও অনেক ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সৃষ্টি ছিল গল্পে। সিনেমা শুধু একজন নায়ক- নায়িকার খাতিরেই হিট নয়। সিনেমার সুদিন ফেরাতে পার্শ্ব চরিত্রগুলোও শক্তিশালি করা অতীব জরুরি। নামকাওয়াস্তে কাউকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে সিনেমা ক্রমশ দুর্বল করা ছাড়া আর কিছুই হয় না।



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭