ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে খালেদা-তারেক লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/05/2018


Thumbnail

কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। বিএনপিতে মায়ের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আলগা করে তারেক জিয়া গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন আলাদা বলয়। ২০০৬ সাল নাগাদ বেগম জিয়াই দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তৃণমূল থেকে শুরু করে তরুণরা হয়ে যান তারেকপন্থী। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর বেগম জিয়ার প্রায় সব কাছের মানুষই সংস্কারপন্থী হয়ে যান। দলের মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া থেকে সাদেক হোসেন খোকা-সবাই দু:সময়ে বেগম জিয়াকে ছেড়ে যান। এর ফলে দলের কর্তৃত্ব নেয় তারেক জিয়া। লন্ডন থেকেই দলের বিভিন্ন কমিটি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব ঠিক করতে থাকেন তারেক। কিন্তু মা-ছেলের দ্বন্দ্ব কখনো প্রকাশ্য রূপ নেয়নি। বরং মা বেগম খালেদা জিয়া সব কিছু সহ্য করেই ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। ছেলের সব সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছেন। ২০১৪’র নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। ঐ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু লন্ডন থেকে ছেলে তারেক তাঁকে বুঝিয়েছে, নির্বাচনে অংশ না নিলেই সরকারের পতন হবে। এভাবে প্রতিটি সিদ্ধান্তে পুত্রের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু এবার জেলে যাবার পর বেগম জিয়া প্রকাশ্যেই ছেলের সমালোচনা শুরু করেছেন। ছেলের অনেক সিদ্ধান্ত তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন তারেক এবং বেগম জিয়াপন্থীতে বিভক্ত।

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম জিয়া কারাগারে। এখন পর্যন্ত তিনি তারেকের বিশ্বস্ত কারও সঙ্গেই দেখা করেননি। বিএনপিতে এখন তারেক জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবদুল আওয়াল মিন্টু। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে বেগম জিয়া গত তিনমাসে কোনো সাক্ষাৎ করেননি। এমনকি আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও বেগম জিয়া তাঁর আইনজীবীদের ডেকে কথা বলেছেন, তারেকের ঘনিষ্ঠ কোনো আইনজীবীর সঙ্গে তিনি কথা বলেননি।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একা ডেকে বেগম জিয়া ‘কোনো হঠকারিতায়’ পা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারেক সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেছেন, ‘ও বিদেশে থাকে দীর্ঘদিন, দেশের বাস্তবতা বোঝেনা। আপনি আপনার মতো করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালান।’

একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, বেগম জিয়া সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতা করে বিদেশ যেতে আগ্রহী ছিলেন। সমঝোতা প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু তারেক জিয়ার কারণেই এই সমঝোতা ভেঙ্গে যায়। বেগম জিয়া গতকালও তাঁর আইনজীবীদের বলেছেন, লন্ডনে যা ঘটবে, তাঁর প্রভাব পরবে নাজিমউদ্দিন রোডে। বেগম জিয়া জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমন একজন আইনজীবীও স্বীকার করেছেন যে, ‘সরকার বেগম জিয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে নিয়েছে লন্ডনে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণেই। না হলে বিদেশ না হোক দেশে বেগম জিয়ার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা হতো।’

বেগম জিয়ার আত্মীয়দের সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ হবার পর বেগম জিয়া আশা করেছিলেন তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা অন্তত দেশে আসবে। শাশুড়ির চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করবে। কিন্তু কোকোর স্ত্রী দেশে আসলেও জোবায়দা দেশে আসেন নি। এ ব্যাপারে বেগম জিয়া তাঁর কষ্ট ও দুঃখের কথা দলের নেতাদের বলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি বিএনপির তিন নেতাকে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। বেগম জিয়া সর্বশেষ দলের নেতৃবৃন্দ এবং গতকাল আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপে তিন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো হলো: ১. শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ২. আদালতে আইনি লড়াই ৩. নির্বাচনের প্রস্তুতি। কিন্তু তারেক জিয়া এখনো বিভিন্ন বিএনপি নেতাকে টেলিফোনে জানান- ‘অপেক্ষা করুণ, কিছু একটা ঘটছে।’এই কিছু একটা নিয়ে বেগম জিয়াও বিরক্ত। বেগম জিয়া তাঁর মুক্তি হোক বা না হোক নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তারেক জিয়া দলের নেতৃবৃন্দকে বলেছেন, নির্বাচনই হবে না।

মা-ছেলের এই দ্বন্দ্ব এখন বিএনপির বিভিন্ন বৈঠকেও প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে। বেগম জিয়া অনুসারী এবং তারেক অনুসারীদের মতপার্থক্য এখন বিএনপিতে গোপন কিছু নয়। তাহলে কি মা-ছেলের দ্বন্দ্বই ভাঙবে বিএনপি?



Read in english- https://bit.ly/2wqx51N

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭