ইনসাইড থট

তারেক রহমান কি বিয়ে করে ব্রিটিশ হলেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/05/2018


Thumbnail

অভিসারে যাবার আগে কিশোর–কিশোরীদের মাঝে যেমন চাপা উত্তেজনা আর ছটফটানী লক্ষ্য করা যায় ঠিক তেমনি আমার বিএনপি ঘরনার বন্ধুদের মাঝে একটা শংকা মেশানো চাপা আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁদের কয়েকজনকে আজ দেদারছে বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে দেখলাম, যদিও তাঁরা আমাদের সার্কেলে কিছুটা কৃপণ বলে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছেন। আমি একটু বাঁকা হয়ে ওদের মনের গহীনে ঢুকার বৃথা চেষ্টায় মত্ত হলাম। খবর পাই না, কিছুই পাই না। হঠাৎ একজন বললেন, তারেক জিয়াকে সরকার আর দেশে আনতে পারবে না। তিনি এখন ব্রিটিশ নাগরিক। নিজের নাগরিকের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের। কারণ হিসেবে সে কিছু অনলাইন পোর্টাল আর ৭১ টেলিভিশনের ফুটেজের কথা উল্লেখ করলো।     

ঐ খবরে দেখলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক তারেক রহমানের ব্রিটেনের কোম্পানি হাউসে দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী অনুযায়ী তিনি ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কোম্পানি হাউসের ওয়েবসাইটে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালট্যান্ট লিমিটেড (ব্রিটিশ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর-০৯৬৬৫৭৫০) নামের একটি নতুন কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে তারেক রহমান নিযুক্ত হোন ২০১৫ সালের জুলাই মাসে।

কোম্পানি হাউসের তথ্যানুযায়ী তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বলা হয়েছে বাংলাদেশি। তবে কোম্পানি হাউসের শেয়ারসহ অন্য তথ্যের জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। এই কোম্পানির ঠিকানাটিও তারেক রহমানের বাসভবনের বলে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা।

খটকা লেগে গেলো, না বলে বলি মনের ভিতর একটা পেচকি লাগার অনুভব হলো, চরম। বন্ধুদের ফোন করলাম। এটা কী করে সম্ভব? নাগরিকত্বে একবার বাংলাদেশ, তাঁর পরে আবার ব্রিটিশ? কাহিনী কী?  

কয়েক বছর আগে Gatestore Institute, International Policy Council এর Soeren Kern এর Britain: Islamic Temporary Marriages on the Rise শিরোনামের এক লেখায় বলা হয়েছে যে, An increasing number of Muslims in Britain are reviving the Islamic practice of temporary marriage, according to a recent BBC television documentary focusing on the "taboo subject."

Temporary marriage - a euphemism for religiously sanctioned prostitution -- is an Islamic custom that unites a man and an unmarried woman as "husband and wife" for a limited period of time (sometimes for less than half an hour).   

Temporary marriage মানে ইসলামে যাকে বলে মুতাহ বিয়ে। এই সুযোগে মুতাহ বিয়ে নিয়ে কিছু কথা বলে নিতে চাই। ইসলামের মহানবীর আমলেই কোরআনের সুরা আন নেসা অবতীর্ণ হয়। সেটা বলা হয় মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়কালে। কেন তা নিয়ে নানা কথা আছে তারিখ, ক্ষণ নিয়ে। কিন্তু আসলল ঘটনা আরো অনেক ব্যপক।   

সুরা নেছা ৪.২৪ এ কী আছে আমরা একটু দেখে নিইঃ “...এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য ইহা আল্লাহ্‌র বিধান। উল্লেখিত নারীগন ব্যতিত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাহাদের মধ্যে যাহাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করিয়াছ তাহাদের নির্ধারিত মাহর নিরধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর রাজী হইলে তাহাতে তোমাদের কোন দোষ নাই। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। 

ইসলামের নবী কেন এটা করলেন? যাদেরকে নিয়ে তিনি মক্কা বিজয় আর মদিনায় হিযরত করেছিলেন তাঁরা দীর্ঘদিন তাঁদের জৈবিক ক্ষুধার জ্বালায় জর্জরিত ছিল। অবস্থা এমন দাড়ালো যে, তাঁরা হযরত মোহাম্মদকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন। পেটের ক্ষুধায় যত নয়, তার চেয়ে জৈবিক ক্ষুধায় তাঁরা ছিলেন খুব নাজুক। তাঁরা যখন হযরত মোহাম্মদকে ছেড়ে চলে যাবার হুমকী দিলেন তখন সুরা নেসা এলো।       

মুতা বিয়ের সাথে তারেক জিয়ার কী সম্পর্ক? সেটা বলার আগে জেনে নিই কীভাবে ব্রিটেনের  নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। যার অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ব্রিটিশ কাউকে বিয়ে করা। আর বিদেশী নাগরিক কেউ যদি কোন ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করতে চান তবে তাঁকে হয় ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে আসতে হবে অথবা ব্রিটেনে অবস্থান করতে হবে। ব্রিটিশ marriages-civil-partnerships আইনে যা বলা আছে তা হচ্ছে। বিদেশী নাগরিক যিনি বিয়ে করতে চান তাঁকে, আর যাকে বিয়ে করবেন তিনিও মানে উভয়েই কম করে হলেও ২৮ দিনের একটা নিটিশ পাঠাতে হবে সুনির্দিষ্ট রেজিস্টার অফিসে (designated register office)। দেশ ভেদে এই বিবাহ প্রক্রিয়ার ভিন্নতা আছে। তার পরে কিছু নিয়ম মেনে বিয়ে করতে পারবেন।         

বিলেতে মুতাহ বিয়ের কট্টর সমর্থক আছেন অনেক বড় বড় আলেম আছেন ১৯৭১ সালের পরে থেকেই। এঁদের সংখ্যা কম নয় তা আমরা বিলাতে বাংলাদেশ বিরোধী নানা প্রচারের মানে‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ টাইপের খবর শুনলেই বুঝতে পারি। ইউরোপ, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে শিয়া সুন্নী মুসলমান উভয়েই এই মুতাহ বিয়ের চরম পক্ষে। এটাকে তাঁরা তাঁদের জৈবিক চাহিদা পুরণের সাথে নাগরিকত্ব পাবার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করে। কারণ ইসলামে ৪ টা পর্যন্ত বিয়ে করা যায় এমন অনেক লিখিত প্রমাণ হাজির করা কঠি কাজ নয়, সেটা দেখিয়েই মুতাহ বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব জাযেজ করা হয়। বিয়ের আগে আনা হয় পবিত্র কোরআনের সুরা নেসাকে, ব্যাখ্যাসহ। আগেই বলেছি বিবিসি এটা নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও প্রচার করেছিলো কিছুদিন আগে। অনেক রিসার্চ ইন্সটিউট ও এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছে।   

আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিলেন যে তিনি তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত আনার জন্য যত চেষ্টা করার করবেন। ঠিক তার পরেই ৭১ টিভিতে প্রচারিত হলো তারেক জিয়ার নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্কিত খবর। ব্রিটেনের কোম্পানি হাউসের তথ্যানুযায়ী তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ওখানে একটা ব্যবসা খুলেছেন।  সেই কোম্পানি হাউসের নথীতে তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বলা হয়েছে বাংলাদেশি। আবার কোম্পানি হাউসের শেয়ারসহ অন্য তথ্যের জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। কাহিনী কি? তারেক রহমানের নাগরিকত্ব একবার বাংলাদেশী আবার তার পরে ব্রিটিশ! যুক্তিতে আসে রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকার সময় কোম্পানি গঠনের আবেন করেন কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে যান। তবে কী মরিয়ম টাউয়ার, চৌধুরী মইনুদ্দিনদের দৌলতে আমাদের তারেক জিয়া সাহেব পেয়ে গেছেন কাউকে বিয়ের জন্য! এখান থেকেই তো ইসলামের সেবায় বহু কিশোরী গেছেন আইএস এর সেবাদাসী হয়ে। ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত চৌধুরী মইনুদ্দিনদের অনেকের সাথে এখন হরিহর আত্মা হয়েছেন আমাদের তারেক জিয়া। তাহলে কী মুতাহ বিয়ে করেই ইংল্যণ্ডের নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন আমাদের তারেক জিয়া! অসম্ভব কী, তার জন্য জান, মান, ইজ্জত দিতে কত পতঙ্গই তো আছে তাঁদের আশে পাশে, যাদের মগজ ধোলায় করেছেন আমাদের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ চৌধুরী মইনুদ্দিনদের দল লণ্ডনের মরিয়ম টাউয়ারে? হতেও তো পারে। প্রশ্নটা উঠছে, তা না হলে এতো অল্প সময়ে ইংল্যণ্ডের নাগরিকত্ব পাওয়া কী বাস্তবে সম্ভব?

    

লেখকঃ সায়েদুল আরেফিন, উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭