ইনসাইড আর্টিকেল

মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/05/2018


Thumbnail

মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে…সত্যিই তাই, মায়ের হাসির থেকে মধুরতা আর পবিত্রতা অন্যকিছুতে নেই। খুব ছোট শব্দ ‘মা’ এর মধ্যেই যে পৃথিবীর সব সুখ-শান্তি লুকিয়ে আছে, এই শব্দের পরিধিও অনেক বিশাল। আমরা জন্ম থেকেই কোনো না কোনো আশ্রয় খুঁজি। আর জন্ম থেকেই যার কোলে সবচেয়ে বড় আশ্রয় পেয়ে আসছি, সে আমাদের মা। আমাদের গর্ভধারিণী, জননী আমাদের কাছে পুরো একটা পৃথিবী।

কীভাবে এলো মা দিবস
মাকে নিয়ে কেন দিবস পালন আর কেনই বা প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করি আমরা। বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা ১৯০৮ সালে। শতাব্দীর শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুল শিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবেন। তাঁর সে ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯০৭ সাল থেকে মার্কিন স্কুল শিক্ষিকা আন্না জারভিস তাঁর প্রাণ-প্রিয়তমা মা অ্যান মারিয়া বিভেশ জারভিস এর মৃত্যু বার্ষিকীর দিনটি মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই দিনটিকে জাতীয় মা দিবস হিসাবে মর্যাদা দেন এবং ১৯৬২ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

যুগ যুগ ধরে মা
মনীষীদের জীবনেও মা ছিল তাদের প্রধান অনুপ্রেরণা।মহানবী হজরত মুহম্মদ (স.) এর সেই অখণ্ডিত বাণী মায়ের পায়ের নিচেই রয়েছে সন্তানের জান্নাত।

মাকে নিয়ে নেপোলিয়ন বোনাপোর্টের সেই উক্তি কে না জানে, ‘আমাকে একজন ভাল মা দাও, আমি তোমাকে একটি ভাল জাতি উপহার দেবো।’

আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, `আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা যা হতে আশা করি তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।` তাঁর মতে, ’যার মা আছে, সে কখনই গরীব নয়।’

জর্জ ওয়াশিংটন তাঁর মাকে নিয়ে বলেন,‘ আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আমার মা। মায়ের কাছে আমি চির-ঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।’

মহিমান্বিতদের জীবনে মা মানেই সফলতার সর্বপ্রথম সিঁড়িটা। তারপর শুধুই সামনের দিকে ওঠা।

মা’কে নিয়ে সাহিত্য
রুশ সাহিত্য এবং বিশ্ব সাহিত্যের সেরা বই ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’। এক সাধারণ মা থেকে বিপ্লবী মা হয়ে ওঠার গল্প আছে এতে। মাকে নিয় আমাদের উপমহাদেশে মানিক বন্দোপাধ্যয়ের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘জননী’। আমাদের দেশে রয়েছে শওকত ওসমানের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘জননী’। ৭০ দশকের নকশাল বাড়ি আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবের পটভূমিতে লেখা মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশীর মা’। এছাড়া মাকে নিয়ে বিশেষ কবিতা, গান, চলচ্চিত্রও কম সৃষ্টি হয়নি যুগ যুগ ধরে।

আমাদের জীবনে মা, অতি সাধারণ মা
জন্মের পর থেকে মায়ের গন্ধে মেখে বড় হয়ে ওঠা, আদর-আবদারের যাবতীয় ভরসা মা। খুব খেয়াল করলেই তাঁর ত্যাগী, পরিশ্রমী মুখের আড়ালে সতেজ আর ঝলমলে একটা মুখ দেখতে পায় সন্তানেরা। স্বামী-সন্তান-সংসার আর কখনোবা নিজের কর্মস্থল- এই জীবনযুদ্ধে আমার মনে হয় প্রতিটা মা’ই জয়ী।

সন্তান জন্মের আগে ভীষণ কষ্ট অথচ স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকে একটি শিশুর মুখ দেখবে বলে। তাকে বড় করে তুলতে নিজের সবটুকুকে দমিয়ে রাখেন, খুব কষ্ট হলে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলেন। একজন মা তাঁর সন্তানের বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করে কথার ডালি সাজিয়ে, সন্তানের চিন্তায়-অসুখে নিজের ঘুম হারাম করেন, আঁচলের কোনায় বেধে রাখা জমানো টাকাটা থাকে তাঁর প্রিয় সন্তানের জন্য রেখে দেয়।

সংসারের বাইরেও মাকে কাজে নামতে হয়। সে ছোট-বড় যে কাজই হোক। তবে, যখন দেখি তপ্ত রোদের মাঝে মা তাঁর শিশুকে পাশে বসিয়ে আপনমনে হাত চালিয়ে কাজ করে চলেছেন, ঘেমে ভিজে যাচ্ছে তাঁর কোমল কিন্তু কঠোর মুখটি, তখন অদ্ভুত এক শ্রদ্ধা চলে আসে। মনে হয় এই খেটে খাওয়া মা তাঁর ওই সন্তানের জন্য কঠিন কাজে নামতে দ্বিধা করেনি।

মা দিবস কেন প্রয়োজন
যে মা এতকিছু করে, সেই মায়েরও বয়স হয়, সেও একসময় ভেঙে পড়ে। সন্তানের মনে রাখতে হবে মা যেন কখনো বোঝা হয়না। সন্তান যদি কোনোদিন মায়ের কাছে বোঝা না হয়, তাহলে মা কেন বোঝা হয় সন্তানের কাছে?

এসব কিছু থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মা দিবসের দরকার আছে। যদিও আমরা মাকে প্রতিদিনই ভালোবাসি। অন্যদিন খুব একটা না ভাবলেও অন্তত একটা দিন মায়ের কথা, তাঁর সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা আমরা ভাবতে পারি। এইদিন থেকেই নতুন ভাবে মায়ের জন্য আলাদা কিছু করতে পারি। তাঁর পরিশ্রমের হালটা একটু ধরতে পারি, তাঁর ত্যাগগুলোকে নিজের মধ্যে একটু করে ধারণ করতে শুরু করি।

বিশেষ এই দিনে তার হাতে তুলে দিতে পারি তাঁর পছন্দের বিশেষ কোনো উপহার, তাঁর জন্য বিশেষ কোনো আয়োজন, তাকে চমকে দিয়ে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, তাকে একটু আনুষ্ঠানিকভাবেই হাত ধরে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলেই ফেলি।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭