ইনসাইড আর্টিকেল

‘মা’ দ্য বস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/05/2018


Thumbnail

‘জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না’ আমার মা। আমার মায়ের দিকের মানুষেরা তাঁকে পান্না বলেই ডাকে। বুঝতে শেখার আগে পান্না নামটি নিয়ে মাকে ক্ষেপাতাম। বলতাম, এই নামের অর্থ কি? মা মৃদু হেসে বলতেন, এ এক অমূল্য রত্নের নাম। তখনো বুঝতাম না। বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখেছি, তখন ভাবি আর হাসি আমার ‘মা’ সত্যি একজন রত্ন। যে রত্ন শরীরে সেঁটে নেই, শুধু অনুভবে মিশে আছে।

‘পান্না’ নামক মহা মূল্যবান রত্নের মতো এখনো পরিবারের ‘বস’ হয়ে আছেন আমার মা। কর্মস্থলের কাজ সামলে বাবার দেখভাল করছেন। আমাদের তিন ভাই বোনের খোঁজ নিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রায় প্রতিদিনই ফোন করে আমার তত্ত্ব তালাশ করছেন। কি খাইচস? মুরগী? (মা জানে মেসে খাবারের মেন্যুতে মুরগীর আধিক্য বেশী থাকে)। মাঝে মধ্যে ভাল মাছ কিনিস। রাত জাগিস না। মশারি টানাস তো? হ্যাঁ উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত জিজ্ঞাসা চলতেই থাকে মায়ের। অনেকদিন না দেখলে ছুটে আসে।

ছোট বেলায় মাকে খুব বেশি কাছে পাইনি। বস্তুত বাবা-মা দু’জনকেই। রোজগারের জন্য রৌদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে যেতেন কর্মস্থলে। বিকেলে মা ফিরে আসতেন। এসে ঘরদোর গুছিয়ে হেঁশেলে রান্না চড়ানোর আগে জিজ্ঞেস করতেন কি খাব কি খাবোনা। কি অসম্ভব তৎপরতা। কি নিবিড় আবেশে জড়িয়ে রাখতেন মা। তবুও এখনো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কিছুই করতে পারিনি তোদের জন্য।

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। মাকে অফিস থেকে এক সপ্তাহের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয় নোয়াখালীর মাইজদিতে। আমি তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য বায়না ধরি। মা আমাকে রেখে যেতে পারলেন না। আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাবাকেও নিয়ে চললেন মা। ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণার্থী ছাড়া আর কারো থাকার বন্দোবস্ত নেই। বাবা আমাকে নিয়ে হোটেল ঠিক করলেন। রাত প্রায় দশটা অব্দি ট্রেনিং সেন্টারে কাটিয়ে হোটেলে ফিরবার সময় হাউ-মাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বললাম, আমি মায়ের কাছে থাকবো। বাবা বোঝালেন, বাড়তি মানুষ থাকার কোনো ব্যবস্থাই নেই। আমার কান্নার তীব্রতা আরও বেড়ে গেল। আমার চিৎকারে সেন্টারের মহিলারাও জড় হতে শুরু করলো। বাবা আমার হাতে চকোলেট গুজে দিয়ে, চ্যংদোলা করে রিকশায় উঠিয়ে সোজা হোটেলে। মায়ের জন্য অসম্ভব মায়ায় আমার হৃদয় বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর মা তাঁর সহকর্মী মহিলাকে নিয়ে হোটেল রুমে এসে হাজির। নিয়ে গেলেন তাঁর সঙ্গে ট্রেনিং সেন্টারে। শোনলাম, মা সেদিন আমাকে রাখতে কর্তৃপক্ষকে দরখাস্ত লিখতে হয়েছিল। যেমনটি এখনো করেন। অসুস্থ হলে সাপ্তাহিক ছুটির অপেক্ষায় না থেকে দরখাস্ত লিখে ছুটে আসেন দেখতে। আর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।

বাংলা ইনসাইডার/এইচপি/ জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭